ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রোজ সকালে ঠেলাবোঝাই ফলবিক্রেতাদের পদচিহ্ন যে পথে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
রোজ সকালে ঠেলাবোঝাই ফলবিক্রেতাদের পদচিহ্ন যে পথে

মৌলভীবাজার: সূর্য উঠতে শুরু করেছে। আলোকিত হচ্ছে চারদিক। চা বাগানঘেরা টিলার এককোণ ঘেঁষে চলে যাওয়া পাকা রাস্তাটি ততক্ষণে কোলাহল মুখর হয়ে উঠেছে।
এক এক করে অনেকে রাস্তা ধরে যাচ্ছেন। ঠেলাবোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন মৌসুমি ফল ও সবজি। রোজ সকালে এ ধরনের প্রায় তিনশ’ বিক্রেতার পদচিহ্নে মুখরিত হয় এ এলাকা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের ভানুগাছ রোডের রোজকার দৃশ্য এটি। শহরবাসী যখন ঘুমে মগ্ন তখন মহাপরিশ্রমী এ মানুষরা তাদের জমির উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য শ্রীমঙ্গলের বাজারে নিয়ে আসেন।



সাধারণত এসব ফল উৎপাদিত হয় মহাজিরাবাদে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে ঠেলাগাড়িভর্তি করে মৌসুমী ফল আনেন বিক্রেতারা। আনারস, লেবু, কাঁঠাল, কলাসহ নানা ফলে পূর্ণ থাকে তাদের ঠেলাগাড়ি।

মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে গিয়ে দেখা যায়, ঠেলাগাড়িতে আনাসর-লেবু-কাঁঠালভর্তি করে বিক্রেতারা দ্রুত বেগে ছুটছেন। তাদের এ গতিময়তা পর্যটন শহর এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের এক বাড়তি সৌন্দর্য। এসব দেখে বিদেশি পর্যটকরাও অবাক বনে যান।
১৪ বছর ধরে শ্রীমঙ্গলসহ দেশব্যাপী ইকোট্যুরিজম নিয়ে কাজ করছেন রাসেল আলম।

এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশে এসে পর্যটকরা এ দৃশ্যগুলো দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। এমনও আনাসর-লেবু ঠেলাওয়ালা আছেন যারা প্রতিদিন ভোর ৩টা-৪টা থেকে কমপক্ষে ১০-১২ কিলোমিটারের ওয়ানওয়ে পথ পাড়ি দিয়ে তাদের কৃষিপণ্য শ্রীমঙ্গলের বাজারে বেচতে আসেন। আমরা যখন বিদেশি পর্যটকদের কাছে এ বিষয়গুলো তুলে ধরি, তখন তারা খুব অবাক হন। ’

...পর্যটকদের কাছে ঠেলাচালকদের কঠোর পরিশ্রমের এ দৃশ্যগুলো বিশেষ করে আলোকচিত্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশের মধ্যে সকালের বাজারের এ দৃশ্যগুলোই ‘বেস্ট’ বলে মন্তব্য করেন ট্যুরগাইড রাসেল।

সকালের পথ থেকে ফেরানো যায় না দৃষ্টি। ভীষণ পরিশ্রমে একেকজন ঠেলাচালকের শরীর ঘেমে একাকার। কতদিন ধরে এ পেশায় আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এক ঠেলাচালক-ফলবিক্রেতা জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এ কাজ করছেন তিনি। তার নাম ইসমাইল মিয়া। এ সুদীর্ঘ সময় ধরে মহাজিরাবাদ এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিন সকালে শ্রীমঙ্গলের বাজারে আনারস-লেবু-কাঠাল ঠেলাগাড়িতে করে বেচতে নিয়ে আসেন তিনি।

এ সম্পর্কে ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন এখানে প্রায় ৩/৪শ’ মানুষ ঠেলাগাড়িতে করে যাতায়াত করে। তারা ১০-১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিজেদের মৌসুমী ফল শ্রীমঙ্গলের বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কেউ কেউ মহাজিরাবাদ থেকে ভোর ৩টা-৪টার দিকেও রওয়ানা দেন। ’

একেকটি ঠেলার ফলের মানের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ হয়। এক হাজার থেকে তিন/সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় পুরো ঠেলাগাড়ির ফল। প্রতিদিন সব খরচ বাদে প্রায় এক-দেড় হাজার টাকার লাভ থাকে বলে জানান এ বিক্রেতা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
বিবিবি/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।