জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলায় মোট ২৯ হাজার ৬৯৩ জন জেলে রয়েছেন। এরমধ্যে ২৩ হাজার ৮৫২ জন নিবন্ধিত ও পাঁচ হাজার ৮৪১ জন অনিবন্ধিত জেলে রয়েছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার এক হাজার ৬০৮ জন সাগরে মাছ ধরা জেলেদের সাহায্য হিসেবে চাল দেওয়া হয়েছে। বাকিদের এ সাহায্যের আওতায় আনতে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে মাছ ধরা জেলেদের সংখ্যা পিরোজপুরে বেশ কম। তবে এর তালিকা অনেক আগে তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় যেমন প্রকৃত মৎস্যজীবী নেই তেমনি অনেক সাগরে মাছধরা প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নাম বাদ পড়েছে। ইতোমধ্যে ওই তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা কেউই সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবেন না।
জানা যায়, স্থানীয় এসব জেলেদের অধিকাংশই মহাজনদের কাছ থেকে দাদন এনেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী এ সব দাদনের টাকাও পরিশোধ করতে হবে। সংসারের ব্যায়ভার বহন ও দাদনের (ঋণ) টাকা শোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক হাজার জেলে। আয়-রোজগারহীনভাবে দীর্ঘদিন বেকার সময় কাটানোর ফলে অনেকের ঘরের চুলায় এখন আগুন জ্বলছে না। এ অবস্থায় উপকূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে চলছে চরম হাহাকার।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছরের একটি নির্দিষ্ট সময় সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সরকার। এ বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিনের অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।
জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল হাওলাদার বলেন, মৎস্য বিভাগ ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই করোনার কারণে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে ইলিশ ধরা প্রায় বন্ধ ছিল। করোনার প্রভাবে গত ২৬ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় বরফ সংকট ও মাছ চালান দিতে না পাড়ায় অনেক জেলেই মাছ ধরতে যাননি। এরপর আবার লকডাউন শিথিল হলেও মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলে আসে। এতে মাস তিনেক ধরে ইলিশ শিকার ধরা বন্ধ রয়েছে উপকূলের জেলেদের। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না তারা।
তিনি আরও জানান, করোনার কারণে এখন গ্রামেও অন্য কোনো কাজ নেই। বিগত বছরগুলোতে সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও জেলেরা এলাকায় দিনমজুরি বা অন্য কোনো কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন তাদের ঘরে বসে বেকার দিন কাটাতে হচ্ছে। আর বিকল্প কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এছাড়া মাছের ব্যবসার জন্য মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের টাকা কিভাবে শোধ করবেন তা নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এসব জেলেরা।
জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি তারিকুল ইসলাম নজিবুল বাংলানিউজকে বলেন, উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে মৎস্যজীবীদের সংখ্যা অনেক হলেও তালিকাভুক্ত সামান্য। এরআগে, তালিকা করার সময় সুবিধা নিতে শাসক দলের অনেক প্রভাবশালীদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। কখন ও কিভাবে এর তালিকা করা হয় তা প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জানানো হয় না।
জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের জেলে ও ট্রলার মালিক ফারুক তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের কাছ থেকে ধারসহ বিভিন্ন এনজি’র কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ও জাল ক্রয় করতে হয়েছে। করোনা ও সাগরে মাছ ধরার অবরোধ থাকায় অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছি। পাওনাদার টাকা চাচ্ছেন। তাদরে ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তার উপরও রয়েছে ট্রলারের শ্রমিক। তাদের সমস্যাও দেখতে হচ্ছে।
সাগরে মাছ ধরা জেলে জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার চারাখালী গ্রামের জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমার পরিবার চলে সাগরে মাছ ধরার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এখন সাগরে মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই আয়ের অন্য পথ খুঁজলেও করোনার কারণে অন্য কোনো কাজ করে পরিবার চালাতে পারছি না।
পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, সমুদ্রে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেদের সরকার খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকেন। নিবন্ধিত প্রতি জেলেকে এ সহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হয়। এছাড়া সাগরে মাছধরা যেসব জেলে নিবন্ধিত তালিকায় নাই তাদের নতুন তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২০
এনটি