বিদেশি গাছ হওয়ায় চারার দামও নেওয়া হয়েছে অনেক বেশি। প্রতিটি চারা চাষিরা কিনেছেন ৩শ থেকে ১২শ টাকা দিয়ে।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে গ্রীন বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মীরা পাম গাছের চারা বিক্রির জন্য এলাকায় আসেন। পাম অয়েলের উপকারিতা সম্পর্কে চাষিদের নিয়ে সেমিনার করেন। ব্যক্তিগতভাবেও চাষিদের বোঝানো হয় পাম গাছের আর্থিক লাভের কথা। মাঠকর্মীরা নগদ ও কিস্তি দুইভাবেই চারা বিক্রি করেছেন চাষিদের কাছে।
চাষিদের বাড়িতে চারা রোপণ, পরিচর্যা ও পরবর্তীতে ফল কেনারও চুক্তি করেছেন তারা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চারা বিক্রির পরে আর মাঠকর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর ৪ থেকে ৬ বছর পরে পর্যায়ক্রমে যখন বেশিরভাগ গাছ ফল দেওয়া শুরু হল তখনও দেখা নেই গ্রীন বাংলাদেশের। গাছে আশানুরূপ ফল না হওয়া, ফল বিক্রি বা ফল দিয়ে তেল তৈরি করতে না পারায় এখন হতাশ চাষিরা। হতাশ হয়ে অনেকে গাছ কেটেও ফেলছেন। দরিদ্র চাষিরা টাকার অভাবে জায়গা দখল করে রাখা গাছগুলোকে কাটতেও পারছেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৯টি উপজেলায় ৫ হাজার পাম অয়েল গাছ ছিল। চাষিরা অনেক গাছ কেটে ফেলেছেন। বর্তমানে মাত্র ৯৩৬টি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৩৫০, শরণখোলায় ২০০, মোরেলগঞ্জে ৯৭, কচুয়ায় ২০, মোংলায় ২১, রামপালে ৯৪, ফকিরহাটে ৫০, চিতলমারীতে ৩৭টি গাছ রয়েছে। তবে চাষি ও স্থানীয়দের দাবি বাগেরহাটে ৫০ হাজারের বেশি পাম গাছের চারা লাগানো হয়েছিল।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শেখ মাসুম বলেন, গ্রিন বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি ৫০টি গাছ লাগিয়েছিলাম। গ্রিন বাংলাদেশের সঙ্গে আমার একটি চুক্তিও হয়েছিল। চারা ক্রয়, গাছ রোপণ ও রোপণ পরবর্তী এক বছরের পরিচর্যায় আমার প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু যখন গাছে ফল আসল তখন আমি আর বিক্রি করতে পারিনি। গাছগুলো অনেক জায়গা দখল করেছিল। যার কারণে আমি সব গাছ কেটে ফেলেছি। মাত্র একটি গাছ আছে বাড়ির পাশে।
নরেন্দ্রপুর গ্রামের সালেহ বেগম বেগম বলেন, ঘেরের পাড়ে নারকেল গাছ না লাগিয়ে ১২টি গাছ পাম অয়েল গাছ লাগিয়েছিলাম। এর মধ্যে ৭টি কেটে ফেলেছি। এখন ৫টি আছে। যা আছে তাতেও তেমন ফল হয় না। কাটতেও ঝামেলা আছে। একটি গাছ কাটতে প্রায় দুইজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। যাতে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে না কেটেও উপায় নেই কারণ যে গাছ আছে তাতে তেমন ফল হয় না।
বাগেরহাট সদর উপজেলার দত্তকাঠি গ্রামের ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমি দশ কাঠা জমিতে পাম গাছের চাষ করেছিলাম। গাছগুলো হৃষ্টপুষ্ট হলেও আশানুরূপ ফল হয়নি তাই কেটে ফেলেছি। শুধু তিনি নন এই অঞ্চলে পাম চাষ করে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। চারা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গ্রিন বাংলাদেশকে খুঁজে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
গাছ নিয়ে কাজ করা অনেকে মন্তব্য করেছেন পাম অয়েল গাছ চির বসন্তের দেশের গাছ। বাংলাদেশে এর ভাল ফলন সম্ভব না। আর বাগেরহাটে যে জাতটা এসেছে সেটা খুবই নিম্নমানের জাত। গ্রিন বাংলাদেশ কোনো ভাল মন্দ চিন্তা না করে শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশে মানুষের কাছে এই চারা বিক্রি করেছে।
গ্রিন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিয়া উদ্দিন মোরল শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোরেলগঞ্জ এলাকায় লোকমুখে শোনা যায় তিনি বিভিন্ন অপরাধের কারণে পলাতক রয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, পাম অয়েল গাছ রোপণের সঙ্গে কৃষি বিভাগ সম্পৃক্ত ছিল না। তারপরও বাগেরহাটের বেশকিছু মানুষ পাম অয়েল গাছ লাগিয়েছেন। আমরা জানতে পেরেছি মাঠপর্যায়ের কিছু মানুষের পাম অয়েল গাছে ফল দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে চাষিদের গাছে ফলের পরিমাণ কম। তাই কাঁচামালের অভাবে বাগেরহাট বা এ অঞ্চলে পাম অয়েল ফল দিয়ে তেল তৈরির কোনো ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠেনি।
তিনি আরও বলেন, চাষিরা ফল নিয়ে বিপাকে রয়েছেন এটা জেনে আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। যারা পাম অয়েল ফল ক্রয় করেন এমন দুজন (মঞ্জুর-০১৭১১-৭৩৪১৯৩ এবং জাহাঙ্গীর ০১৭৭৫-৭৭৪৩০০) ব্যক্তিকে পেয়েছি। চাষিরা ইচ্ছে করলে এদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
আরএ