ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় ২৪ ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘটে পাটকল শ্রমিকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
খুলনায় ২৪ ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘটে পাটকল শ্রমিকরা

খুলনা: রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে পরিচালনা ও শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক অবসরের খবরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে খুলনার শিল্পাঞ্চল। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুর ২টা থেকে শ্রমিকরা মিলে ২৪ ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘট পালন শুরু করেছে। যা বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। 

এর মধ্যে সরকারি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে বুধবার দুপুর ২টা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা মিলগেটে আমরণ অনশন শুরু করবেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রক্ষা সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুর ২টা থেকে খালিশপুরের ৪টি, দিঘলিয়ার ১টি, আটরা শিল্পাঞ্চলের দু’টি এবং যশোরের নওয়াপাড়ার রাজঘাটের দু’টি পাটকলে অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেয় মিলের শ্রমিকরা।



অবস্থান ধর্মঘট চালাকালীন শ্রমিক নেতারা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত মিল বন্ধ করলে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। ফলে বেকারত্ব বাড়বে। কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

কর্মসূচিতে খুলনা-যশোরের ৯ পাটকলের গেটে শ্রমিকরা অবস্থান নেন। সেখানে মিলগুলো চালু রেখে শ্রমিকরা সন্তানদের পড়া লেখা, দু'বেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার আকুতি জানানো হয়। শ্রমিকরা বিজেএমসিকে বিলুপ্ত ও মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করে সরকারিভাবে চালু রাখার দাবি জানান।

খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা দুপুর ২টা থেকে মিলে অবস্থান ধর্মঘট পালন শুরু করেছে। এসময় আয়োজিত সমাবেশে সবাপতিত্ব করেন মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন।  
 
অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি চলাকালে বক্তৃতা করেন, সোহরাব হোসেন, মুরাদ হোসেন, আবু হানিফ, কওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, দ্বীন ইসলাম, হেমায়েত উদ্দিন, আবুল কালাম জিয়া, নূর ইসলাম, গাজী মোশারফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম লিটু, আব্দুল মান্নান খান, মতিয়ার রহমান, মনিরুল ইসলাম শিকদার প্রমুখ।

শ্রমিক নেতারা জানান, দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ হলে শুধু ২৫ হাজার শ্রমিক বেকার হবে না, বরং পাটশিল্পের সঙ্গে জড়িত দেশের প্রায় তিন কোটি লোকের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থা থেকে সরকার অবশ্যই ফিরে আসবে বলেও শ্রমিক নেতারা মনে করেন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রক্ষা সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সরদার আব্দুল হামিদ বলেন, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, স্টার, প্লাটিনাম, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, খালিশপুর, জেজেআই, আলিম ও কার্পেটিং জুট মিলে প্রায় ৮ হাজার ১শ শ্রমিক কর্মরত। হঠাৎ করেই মিল বন্ধ হলে এসব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।

তিনি বলেন, নানামুখী চক্রান্তে লোকসানের কথা বলে সরকারি পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য পাটকলে লোকসান হয় না। মাথাভারী প্রশাসনের পরিবর্তন আনতে হবে। একই সঙ্গে মিল বন্ধের এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

এদিকে, চলমান সমস্যা নিরসনে দেশের ২৫টি পাটকলের সিবিএ নেতারা গত সোমবার বিকেলে ঢাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রাণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। শ্রম দপ্তরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক চললেও তেমন কোনো সুরাহা হয়নি।

ঢাকা থেকে প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএর সভাপতি সাহানা শারমিন জানান, আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তবে ১ জুলাইর পর মিল চালু থাকলে খুলনার ৯ পাটকলের নেতারা বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ৩০ , ২০২০
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।