ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনার কয়রায় কাবিখার কাজে পুকুর চুরি!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২০
খুলনার কয়রায় কাবিখার কাজে পুকুর চুরি! ম্যাপ

খুলনা: খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের মালীখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বাগালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার পাড় ও ইউপি সদস্য হোসনেয়ারা খাতুন। তারা যৌথভাবে এ প্রকল্পের মাটি ভরাট থেকে শুরু করে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে অনিয়ম করেছেন।

প্রকল্পের গম পাচারের সঙ্গেও তারা জড়িত। সম্প্রতি এ প্রকল্পের ৩০ টন গম পাচারকালে পাইকগাছা থানা পুলিশ তা জব্দ করেছে।

জানা যায়, কয়রার বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের মালীখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ চলছে। কাজের তদারকিতে রয়েছেন ইউপির ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য হোসনেয়ারা খাতুন ও ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য পংকজ সানা। তবে ইউপি চেয়ারম্যান ও হোসনেয়ারা খাতুন এ কাজের তদারকি থেকে পংকজ সানাকে সরিয়ে রেখেছেন। প্রকল্পের কাজে মাটি ভরাটের জন্য স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে কাজ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান ও হোসনেয়ারা খাতুন ড্রেজার এনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে মাঠ ভরাটের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ করাচ্ছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের ভাষ্য মতে কাজ প্রায় শেষ দিকে রয়েছে।

এ প্রকল্পের জন্য গত ২৫ মে তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১১৫ টন গমের ছাড়পত্র দেন। পরে ১৫ জুন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা গোডাউন থেকে গম, প্রকল্প প্রধান হোসনেয়ারা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। ১৭ জুন গোডাউনের অফিসার ইনচার্জ হোসনেয়ারা খাতুনের কাছে গম তুলে দেন।

অভিযোগ উঠেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার পাড় ও ইউপি সদস্য হোসনেয়ারা খাতুন স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করিয়ে ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নামমাত্র মাটি ভরাট করেছিলেন।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, এ প্রকল্পের কাজের জন্য স্থানীয় কোন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়নি। মাটি ভরাটের কথা থাকলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ভরাটের কাজ করানো হচ্ছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় জব্দকৃত গম ছাড়ানোর লক্ষ্যে যে মাস্টার রোল দাখিল করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভুয়া। কারণ, যেহেতু ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ভরাটের কাজ করা হয়েছে, সেখানে কোন শ্রমিকই কাজ করেনি, তাহলে মাস্টার রোল হলো কীভাবে?

ড্রেজারের বিল দেওয়ার জন্য তারা কৌশলে ভুয়া মাস্টার রোল বানিয়ে এ গম বিক্রি করে দিয়েছেন।

তাদের বিক্রি করা গম অবৈধভাবে পাচার করার সময় মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে পাইকগাছার কাপিলপুনি থেকে পুলিশ জব্দ করে। পুলিশের জব্দ করা দুইটি ট্রাকে অনুমানিক ৩০ টন গম রয়েছে। পরে পুলিশের কাছে রাজিবুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গমের মালিকানা দাবি করেন। পরে বুধবার পুলিশ এ গম আদালতের নিকট হস্তান্তর করেছে।

পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফি বলেন, কাবিখার গম পাচার হচ্ছে এমন সন্দেহের কারণে কপিলমুনি থেকে দুই ট্রাক গম জব্দ করা হয়। পরে রাজিবুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী গমের মালিকানা দাবি করে লিখিত আবেদন করেছেন। আমরা জব্দ করা গম ও রাজিবুলের আবেদন আদালতের কাছে হস্তান্তর করেছি।

বাগালীর ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, উপজেলা পর্যায়ের দুই জন সরকারি কর্মকর্তা ও আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার পাড় ও ইউপি সদস্য হোসনেয়ারা খাতুন এ কাজের সঙ্গে জড়িত। পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এমনকি কাজ তদারকির দায়িত্বে মেম্বার পংকজ সানা থাকলেও তাকে কোন কাজে লাগানো হয়নি। চেয়ারম্যান ও হোসনেয়ারা মেম্বর যৌথভাবে নামমাত্র এ কাজ সমাপ্ত করেছে। তারা শ্রমিক না নিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেছেন। তারা এলাকায় কোন গম আনেননি। তাদের নিজস্ব লোকদের ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করিয়েছেন। তো এলাকায় গম এনে কাকে দেবেন? তারা সবাই নিজেরা নিজেরাই এ কাজের সাথে জড়িত।

৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার পংকজ সানা বলেন, প্রকল্পটি আমার বাড়ির পাশে। তবে আমার দায়িত্ব থাকলেও তা পালন করা সম্ভব হয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। আর গম শ্রমিকরা বিক্রি করেছে। এসব কিছুর প্রধান দায়িত্বে হোসনেয়ারা মেম্বার রয়েছেন। আমি কিছু জানি।

হোসনেয়ারা মেম্বারের কাছে এ কাজের অনিয়মের বিষয়ে কিছু জানতে চেয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘তিনি এখন খুব অসুস্থ, তাকে ডিস্ট্রার্ব করা যাবে না’। এই বলে ফোনটি কেটে দেন।

এদিকে পাইকগাছা থানা কর্তৃক গম আটকের পর থেকে হোসনেয়ারা খাতুনের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, আমার দায়িত্ব ছিল গমের ছাড়পত্র দেওয়া। তার পর তারা কী করেছে আমার জানা নেই। তবে এ প্রকল্পের কোন অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।