ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটকল লাভজনক করা সম্ভব’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২০
‘১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটকল লাভজনক করা সম্ভব’ শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী | ফাইল ছবি

ঢাকা: গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, অথচ মাত্র ১ হাজার তিনশো কোটি টাকা খরচ করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব ছিল বলে জানিয়েছেন প্রবীণ শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি।

গোল্ডেন হ্যান্ডশেক হচ্ছে স্থায়ী কোন শ্রমিককে মজুরি কমিশন অনুযায়ী সকল পাওনা পরিশোধ করে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া।

শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল লাভজনক করতে আমরা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম সরকারকে। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) বর্তমান মোট তাঁত হচ্ছে ১০ হাজার ৪০০টি। এর মধ্যে হেসিয়ান তাঁত হচ্ছে ৬২৩২টি আর সেকিং তাঁত আছে তিন হাজার ৬৯৬টি। বর্তমানে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সেকিংয়ের চাহিদা কমে গেছে। আমাদের ৮৬ কেজি বড় যে বস্তা তৈরি করা হতো সেটা হচ্ছে সেকিং চট। এখন কিন্তু চালের সব বস্তা হয়ে গেছে ৫০ কেজি আর ৩০ কেজি। এগুলো হচ্ছে হেসিয়ান চট। এই বস্তাগুলোর ফিনিশিং এবং কোয়ালিটি সুন্দর, দেখতেও ভালো দেখা যায়। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এই বস্তার চাহিদা আছে। বিপরীতে ৮৬ কেজির সেকিং বস্তার চাহিদা কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, একটা মেশিন এবং দুইজন শ্রমিক দুই শিফটে ১৬ ঘণ্টা কাজ করলে ১ বছরে মাত্র ১২ থেকে ১৪ টন উৎপাদন হয়। শ্রমিকের মজুরি আর পাটের দাম মিলে এই প্রোডাকশন দিয়ে পাটকল চলতে পারে না। এটা অচল এবং লোকসান হবেই। এটার বিকল্প হচ্ছে আমরা যদি আমাদের উৎপাদন ৩৫ টন কিংবা ৪০ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিন স্থাপন করি, তাহলে লোকসানের পরিবর্তে এটা লাভজনক হবে। আমাদের প্রস্তাব ছিল সরকারের কাছে ৬২৩২ হেসিয়ান তাঁত উঠিয়ে ফেলে, তার পরিবর্তে তিন হাজার ৫০০টি চায়না অটোমেটিক লুম স্থাপন করতে। এই চায়না অটোমেটিক লুম থেকে বার্ষিক ৩৬ টন উৎপাদন করা সম্ভব। ৩৫০০টি চায়না অটোমেটিক লুমের দাম মাত্র সাড়ে তিনশো কোটি টাকা। এর সাথে সংগতিপূর্ণ আরও দুটি সেকশন বিম এবং ওয়ার্ক উইন্ডো তিনটা সেকশন আধুনিকায়ন করতে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। দেড়শ কোটি টাকা মেইনটেনেন্স খরচ থাকবে। এর সাথে চারশো কোটি টাকা থাকবে রানিং ক্যাপিটাল। এই চায়না মেশিন স্থাপন করলে, একই সাথে যদি মানসম্মত পাট ক্রয় করা হয়, তাহলে বর্তমান উৎপাদন থেকে তিনগুণ উৎপাদন বাড়বে। শ্রমিকদের বর্তমান মজুরি গড়ে ১৮,০০০ টাকা, তখন যদি ৩০,০০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয় তারপরেও লাভজনক হবে, এটা আমরা হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছি।

পাটকল লাভজনক করার উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এই মেশিন আমাদের দেশে নতুন না। আমাদের আকিজ জুট মিল বেনাপোলে সম্পূর্ণ চায়না টেকনোলজি ব্যবহার করছে। তারা বিদেশে তাদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে খুব ভালোভাবে চলছে।

প্রবীণ এই শমিক নেতা আরও বলেন, মাত্র ১৩০০ কোটি টাকা খরচ করলে আমাদের হেশিয়ান তাঁত কল আধুনিকায়ন করা সম্ভব। একই সাথে সেকিং তাঁতের যদি মার্কেটে চাহিদা থাকে এটাও চলতে থাকবে। পরবর্তীতে হেশিয়ান তাঁতের লাভ থেকেই সেকিং তাঁতকেও আধুনিকায়ন করা সম্ভব। মাত্র এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ করলে আমরা পাটশিল্পের সংকট দূর করতে পারি। এটা না করে এখন ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে।

শহিদুল্লাহ চৌধুরী সরকারের সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের এই অপরিপক্ব এবং দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত অবাস্তব এবং অনপোযুক্ত। এই সিদ্ধান্ত মারাত্মকভাবে দেশের বর্তমান সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এই কর্মসূচির ফলে দেশ এবং সরকার কারও কোন উপকার হবে না, ক্ষতি ছাড়া।

আরও পড়ুন:
‘পাটশিল্পের উন্নয়নে চীনের লাভজনক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি’

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
আরকেআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।