ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মায় নৌকা ডুবি: সংসারে আর রইল না কেউ উপার্জনের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২০
পদ্মায় নৌকা ডুবি: সংসারে আর রইল না কেউ উপার্জনের

কুষ্টিয়া: চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে সংসার শরিফুল ইসলামের। বাবা-মা দুজনই মারা গেছেন। নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী হিসাবে কাজ করতেন তিনি। করোনার কারণে কাজও বন্ধ। দীর্ঘদিন বসে থাকায় সংসারে অভাবে নতুন কাজের সন্ধ্যানে ছুটে বেড়ান শরিফুল। কোন কাজ না পেয়ে সোমবার (০৬ জুলাই) রাতে তার স্ত্রী কল্পনা খাতুনকে বলে পদ্মার চড়ে এলাকার লোকজনদের সাথে খড় কাটতে যাবো। কখনো এর আগে এ কাজে যাননি তিনি। তাই মঙ্গলবার সকালে উঠেই এলাকার অন্যদের সাথে এ কাজে যান। তবে অন্যরা বেঁচে ফিরলেও লাশ হয়ে ফিরেছে শরিফুল।

গত মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মানদীর চর সাদিপুর এলাকায় নৌকাডুবে যাওয়ার ঘটনায় নিখোঁজ চার জনের মধ্যে একজন এই শরিফুল ইসলাম।

একদিন পরে বুধবার (০৮ জুলাই) দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল।

সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন এই শরিফুল। বিভিন্ন সময়ে সংসারের অভাবের জন্য এনজিও লোক ও মানুষের কাছে ধার করেও সংসার চালিয়েছেন। তবে এবার তিনিই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তিনি সাঁতার না জানায় নৌকা ডুবির ঘটনায় পানিতে ডুবে যান।

শরিফুলের একমাত্র ছেলে আলী আজগর বুঝতে পারছেন না তার বাবা মারা গেছেন। সে ভাবছে কাজ করতে গেছে। তবে বাবা আসছে না কেনো বার বার মাকে জিজ্ঞাসা করছে। লোকজন দেখে বাড়ির পাশে বাচ্চাদের সাথে খেলা করছিল সে।

আলী আজগর বলে, ‘আমার আব্বা মেলাদূরে কাজে গেছে। এবার ঈদে আমি আব্বার সাথে ঢাকায় বেড়াতে যাবো। আমাকে বলেছে আব্বা। ’

শরিফুলের স্ত্রী কল্পনা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘অভাবের সংসার ছিল। ঘর দিয়ে পানি পড়তো। তাই এক মাস আগে ধার দেনা আর ঋণ নিয়ে ঘরে চাল দিয়েছি। ভেবেছিলাম বর্ষায় আর কষ্ট করতে হবে না। শান্তিতে ঘরে থাকবো। কিন্তু শান্তি কপালে নেই। যে মানুষটি ঘর তৈরি করল সে তো থাকতে পারল না। ’

তিনি বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল। সবই পদ্মা নদী খেয়ে নিল। আমাদের মাথার ওপরে আর কেউ রইল না। পেটের বাচ্চা তার বাবার মুখও দেখতে পারল না। ’

শরিফুলের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শরিফুল খুবই পরিশ্রমী ছিল। করোনার কারণে রাজমিস্ত্রির কাজ হচ্ছিল না। তাই বেশ কয়েকদিন বসে ছিল। মঙ্গলবারই প্রথম নদীর ওপারে খড় কাটার জন্য যাচ্ছিল। তবে এ যাওয়ায় তার শেষ যাওয়া হয়েছে। শরিফুলের ছোট বাচ্চা আর স্ত্রী। পরিবারটি এখন কিভাবে চলবে এই চিন্তা। ’

শরিফুলের বোন কাজলী খাতুন বলেন, ‘সংসারের অভাবের কারণে আমার ভাই নদীর ওপারে কাজে গিয়েছিল। সে সাঁতার জানতো না। পদ্মা নদী আমার ভাইকে কেড়ে নিলো। ’

মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মানদীর চর সাদিপুর এলাকায় নৌকাডুবে যাওয়ার ঘটনায় ১৩ জনের মধ্যে ৯ জন শ্রমিক সাঁতরে এবং স্থানীয়দের সাহায্যে উদ্ধার হলেও সাঁতার না জানায় চারজন পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়।

এর মধ্যে বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউননিয়নের জামালপুর গ্রামের রঞ্জিতের ছেলে জুবায়ের ওরফে জুবা (১৯), একই এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩০) এবং নজুর ছেলে জাকির (২৯) এর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৩ ঘন্টা, ০৯ জুলাই, ২০২০
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।