এতে দিন দিন করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। গ্রামের মানুষদের সচেতন করতে প্রশাসন কাজ করলেও পাল্টায়নি কোনো কিছু, আগের মতই স্বাভাবিক নিয়মেই যেন চলছে তারা।
ভোলা সদরের ভেদুরিয়া, ব্যাংকেরহাট, তুলাতলী ও ঘুইগারহাটসহ বেশ কিছু হাট ঘুরে দেখা গেছে শহরের চেয়ে গ্রামের হাট বাজারের ভিন্ন চিত্র। এসব গ্রামের হাটবাজারে মানুষের সমাগম অনেক বেশি। এখানে একদিকে মানুষের ভিড় অন্যদিকে গাদাগাদি করে চলছে কেনাকাটা। স্বাভাবিক নিয়মেই চলছেন তারা। কারো মুখে মাস্ক নেই, নেই হাতে গ্লাভস কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা।
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই যে যার মত চলছেন। করোনা মহামারি সম্পর্কে জেনেও এরা একদিকে যেমন নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলছেন অন্যদিকে তাদের পরিবার ও প্রতিবেশীরাও পড়ছে মারাত্বক ঝুঁকিতে।
এ অবস্থায় সবাইকে আরো বেশি সচেতন করা না হলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামের মানুষ এত অচেতন যে তারা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পালন করেন না। সরকার প্রতিনিয়ত তাদের সচেতন করছে, কিন্তু গ্রামের মানুষগুলো সেই নিয়ম মানছেন না, এ জন্য আমরা খুবই আতঙ্কিত ও চিন্তিত।
মনজু ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামের মানুষদের ভেতরে সচেতনতা বলতে কিছু নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের আরো নজরদারি বাড়ানো উচিত।
প্রভাষক মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসক অনেক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা করছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতা কমিটি গঠন করে দেওয়া হলে মাস্ক ব্যবহার থেকে শুরু করে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে ওই কমিটি দৃষ্টি রাখবে, এতে কিছুটা হলেও মানুষ সচেতন হবে।
অ্যাডভোকেট মেসবাহুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, শহরের লোকজন সচেতন থাকলেও গ্রামের লোকজন মোটেও সচেতন নয়, তাদের কোনোভাবে বোঝানো যাচ্ছে না করোনা রোগটির ভয়াবহতা। তারা যেভাবে শারীরিক দূরত্ব না মেনে চলছে তাতে এটা আরো বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
গ্রামের হাট বাজারগুলোতে প্রচার-প্রচারণা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের সব ধরনের কার্যক্রম চলছে। প্রত্যন্ত এলাকাতে মানুষকে সচেতন করতে জেলা পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
তিনি বলেন, আমরা টহল বৃদ্ধি করেছি। পুলিশের উপস্থিতি থাকা অবস্থায় এক ধরনের চিত্র, ফিরে আসার পর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। নিয়মগুলো পালনের বিষয়টি তাদের ভেতর থেকে আসে না। জোর করে পালন করানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে, তবুও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে যাতে সব মানুষ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব জনগণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জনসাধারণ যাতে মাস্ক পড়ে চলাচল করে সেটি নিশ্চিত করছি, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সেটির প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। বিনা কারণে যাতে বাইরে বের না হয় সেটা নিশ্চিত করছি আমরা।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে শহরের মত করে গ্রামের মানুষকে আরো বেশি সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি এলাকাবাসীর।
অপরদিকে স্বাস্থ্যবিভাগের হিসাবে গত চার মাসে জেলায় মোট ৩ হাজার ৯৭৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও বরিশালে পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৭৬৯টি। করোনা পজিটিভ হয়েছে ৩৭৬ জনের। এদের মধ্যে মারা গেছে ৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১৯৯ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
কেএআর/আরএ