ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মধুপুরে একই পরিবারের চারজনকে গলা কেটে হত্যা

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২০
মধুপুরে একই পরিবারের চারজনকে গলা কেটে হত্যা

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুরে নিজ বাড়িতে নারী, শিশুসহ একই পরিবারের চার জনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।  

শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  মধুপুর উপজেলা সদরের মাস্টারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

 

নিহতরা হচ্ছেন- ব্যবসায়ী আব্দুল গনি (৫২), তার স্ত্রী তাজিরন বেগম (৪২), তাদের ছেলে তারিকুল ইসলাম ওরফে তাজেল (১৮) ও মেয়ে সাদিয়া (৭)।  

নিহত আব্দুল গনি রিকশা-ভ্যান বেচা-কেনা ও সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার স্ত্রী গৃহিনী, ছেলে তাজেল ভাইঘাট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র এবং মেয়ে সাদিয়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিশু শ্রেণিতে পড়তো। তাদের বড় মেয়ে সোনিয়া (২২) বিবাহিত শ্বশুরবাড়ি থাকেন।  

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আব্দুল গনির পৈত্রিক বাড়ি মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ি। তার শ্বশুরবাড়ি উপজেলা সদরের মাস্টারপাড়ায়। বছর দুয়েক আগে শ্বশুরবাড়ির কয়েকটি বাড়ি পরে জায়গা কিনে বাড়ি করেন তিনি। তারপর থেকে পরিবার নিয়ে সেখানেই বসবাস করতেন।
 
আব্দুল গনির বড় মেয়ে সোনিয়ার মধুপুরের কাকরাইদ গ্রামে বিয়ে হয়েছে। সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার একাধিকবার তার বাবা-মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিলে নম্বরটি বন্ধ পান। শুক্রবার সকালেও যোগাযোগের চেষ্টা করে না পেয়ে বিষয়টি তার নানার বাড়িতে জানান। পরে সোনিয়ার নানি কারিমা বেগম আব্দুল গনির বাড়িতে গিয়ে গেটে বাইরে থেকে তালা দেখতে পান। এসময় তার ছেলে সাইফুলকে খবর দিয়ে আনেন। সাইফুল বাড়ির ভেতরে ঢুকলে ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ পান। পরে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে তালা ভেঙে তিনটি কক্ষে চার জনের মরদেহ দেখতে পায়।

দুপুরে সরেজমিন মধুপুর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ মাস্টারপাড়া এলাকা। এ পাড়ার ৬ নম্বর সড়কে নিহত আব্দুল গনির শ্বশুর আবু তাহেরের বাড়ি। আবু তাহেরের বাড়ির কয়েক বাড়ি উত্তরেই আব্দুল গনির বাড়ি। বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআইসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। বাড়িটির চারপাশেই উৎসুক মানুষের ভিড়। ঘরের বারান্দায় উঠতেই তীব্র দুর্গন্ধ ভেসে আসে। পশ্চিম পাশের কক্ষে ঘাটের নিচে আব্দুল গনির ছেলে তাজেলের গামছা দিয়ে হাত-পা বাঁধা মরদেহ পড়ে রয়েছে। তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত। মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাঝের কক্ষে স্ত্রী তাজিরন ও ছোট মেয়ে সাদিয়ার মরদেহ খাটের উপর। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। পূর্ব পাশের কক্ষে খাটের উপর আব্দুল গনির মরদেহ। তার কপালসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। নিহতদের সবার শরীরে রক্ত শুকিয়ে রয়েছে, ফুলে গেছে মরদেহ। তীব্র দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল সেখান থেকে। ঘরে কিছু কাপড়-চোপড় এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকলেও স্টিলের আলমারি, শো-কেসসহ অন্য সব কিছু রয়েছে অক্ষত।

আব্দুল গনির পাশেই সালাউদ্দিন ওরফে হাবলুর বাড়ি। সালাউদ্দিনের স্ত্রী সুমি আক্তার জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে এখন সাধারণত কেউ কারো বাড়ি যান না। তাই আব্দুল গনির পরিবার বাসায় ছিল কি না তা তাদের জানাও ছিল না। তবে আব্দুল গনির বাড়ি থেকে কোনো চিৎকার বা শব্দ তারা পাননি।  
আব্দুল গনির স্ত্রীর ফুপাতো ভাই ওই এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, সর্বশেষ বুধবার রাত ৯টার দিকে আব্দুল গনিকে তিনি বাড়ি ফিরতে দেখেছেন। গলির মোড়ে তার সঙ্গে কথাও হয়েছে। তাই বুধবারের পরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।  

নিহত আব্দুল গনির ভাই সায়েদ আলী জানান, তার ভাই অনেক সহজ সরল মানুষ ছিলেন। সম্পত্তি নিয়ে বা ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ ছিল না। কি কারণে এত বড় ঘটনা ঘটলো তা তারা বুঝতে পারছেন না।  

শুধু নিহতদের পরিবার নয়, এ ঘটনায় হতবাক হয়ে গেছে পুরো মধুপুর শহর। এ ধরনের ঘটনা গত ৫০ বছরেও মধুপুরে ঘটেনি বলে স্থানীয়রা জানান।  

মধুপুর পৌরসভার মেয়র মাসুদ পারভেজ জানান, মধুপুরে এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।  

ঘটনাস্থলে কর্মরত জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দত্ত জানান, সম্পত্তি নিয়ে জটিলতা, সুদ বা অন্য কোনো ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ অথবা নারী সংক্রান্ত কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা আব্দুল গনির পূর্বপরিচিত ছিল। দু-একদিন আগেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। খুনিরা খুন করার পর ঘরে ও গেটে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায়।

মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিক কামাল বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে অব্দুল গনির তিন শ্যালক জামাল, সাইফুল ও সালামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।  

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, সম্পত্তি, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও নারী সংক্রান্ত বিষয় এই তিনটিকে সামনে নিয়েই তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। নিহতদের এবং তার স্বজনদের ও তাদের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্টদের মোবাইল ফোনের তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষন করা হবে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা একটি কুড়াল উদ্ধার করা হয়েছে।  

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। দ্রুত এর রহস্য উদঘাটন করা যাবে বলেও আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২০/আপডেটেড: ১৭৫৫ ঘণ্টা
আরআইএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।