আর একারণেই চম্বোংগাইয়ের করওয়াই স্বজনেরা তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ঘটনাটি কোনো গল্পের অংশ নয়।
একরকম ছিনিয়েই নিয়ে আসেন ছোট্ট শিশুটিকে। নিজের ভাষার বাইরে কিছু বলতে না পারা চম্বোংগাইয়ের চোখে সেদিন যে কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠেছিল সেটি অগ্রাহ্য করার শক্তি হয়নি সিমবিরিংয়ের। তাই কোনো আশ্রয়শিবিরে না পাঠিয়ে নিজের বাড়িতেই নিয়ে আসেন শিশুটিকে। তার সন্তানদের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে চম্বোংগাই।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্রে সুবিস্তৃত দ্বীপাঞ্চলটিতে এখনও আধুনিক প্রযুক্তি দূরের কথা, সভ্যতার ছোঁয়াও লাগেনি। একবিংশ শতাব্দীতেও দ্বীপের আদি এসব গোত্রের মানুষ হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে বের হতে পারেনি।
ড্যানিয়েল ডিফোর লেখা রবিনসন ক্রুসোর সেই মানুষখেকো আদিবাসীদের গল্প অনেকেরই পড়া। শুনলে অবাক হবেন তেমনই মানুষখেকো এক জাতি এ কাওয়াইরা।
যোদ্ধার সাজে এক করওয়াই। ছবি: সংগৃহীত।
২০০৬ সালে, ছোট্ট চম্বোংগাইকে শুধু মৃত্যুদণ্ডই নয়, তার মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছিল কাওয়াইরা। বহুবার এদের আদিম মানসিকতা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকার। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও আজও এমন ঘটনা সেখানে ঘটে।
কাওয়াইদের ধারণা ডাইনি বা শয়তানদের পুড়িয়ে না খেলে এরা আবারও তাদের ওপর ভর করবে। নিশ্চিহ্ন করে দেবে তাদের গোত্র। কোনো দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলেই তার আশপাশের কাউকে এরা চিহ্নিত করে অশুভ শক্তির উৎস হিসেবে। আর মেরে কেটেকুটে খেয়ে ফেলে।
ছোট্ট চাম্বোংগাইয়েরও একই পরিণতি হতো যদি না সিমবিরিং ঠিক সময়ে তাকে উদ্ধার করতেন। আজ সেই ছয় বছরের শিশুই ১৪ বছর পেরিয়ে ২০-তে পা রেখেছে। ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় এখন চম্বোংগাই। কিন্তু নিজের গোত্রের কথা ভুলতে পারেনি সে।
চম্বোংগাই জানে তার কুসংস্কারাচ্ছন্ন স্বজনদের কারো মনে হয় না মানুষ হত্যা পাপ। তারা এটিকে হত্যা হিসেবেই ধরে না। ছেলেবেলায় বিবাহিত এক নারীর সঙ্গে তার চাচার প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার পর চম্বোংগাইয়ের চোখের সামনেই তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। তখন তার কাছেও এটি স্বাভাবিকই মনে হয়েছে যা এখন ভাবলে অপরাধবোধে আচ্ছন্ন হয় তার হৃদয়। ঐতিহ্যবাহী সাজে উৎসব পালনে ব্যস্ত করওয়াই জাতি। ছবি: সংগৃহীত।
নিজ জাতিতে সভ্যতার ছোঁয়া দিতে তাই ১৪ বছর পরেও সেখানে ফিরে গিয়েছিলেন চম্বোংগাই। স্বজনেরা তাকে জড়িয়ে ধরেছে ভালোবাসায়। অথচ ১৪ বছর আগে এরাই হিংস্র হয়ে গিয়েছিল তাকে মেরে ফেলার জন্য।
চম্বোংগাই জানেন এদের মধ্যেও পরিবর্তন আসবে। তিনি নিজে তাদের বুঝিয়েছেন স্বজনদের এভাবে মেরে ফেলা হত্যাকাণ্ড ছাড়া কিছু নয়। তাদের এখন গোত্রপ্রধান হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করে তার কথা মেনে নিতে হবে। তাদের শিক্ষিত হতে হবে।
অশ্রুসিক্ত হয়ে ফিরে আসার সময় করওয়াইদের কথা দিয়ে এসেছেন শিগগিরই ফিরে যাবেন নিজভূমিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
কেএসডি/এএ