ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সিলেট-১ আসনে আ’লীগ-বিএনপি, জাপায় ‘নতুন মুখ’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
সিলেট-১ আসনে আ’লীগ-বিএনপি, জাপায় ‘নতুন মুখ’ সিলেটে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। (ফাইল ফটো)

সিলেট: ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি সিলেট। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিথ প্রচলিত আছে সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাঙ্খিত এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয়পার্টির (জাপা) প্রার্থী হচ্ছেন কে? এনিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়া নিয়েও দলের ভেতর চলে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে অর্থমন্ত্রীর সহোদর একে আবদুল মোমেনের।  

এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার ভাইয়ের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। আর আগে ভাগে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

যদিও এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে সমালোচনার তীরবিদ্ধ। অবশ্য রাজনীতির শেষ কথা বলতে কিছু নেই, সে হিসেবে দলের নতুন মুখ হিসেবেও আলোচনায় আছেন তিনি।

আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর কমিটির সভাপতি, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানও। তাকে দলীয় প্রার্থী দেখতে চাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ। যদিও নির্বাচন না করার কথা জানিয়েছেন দলের এই হেভিওয়েট নেতা।

এছাড়া দলের সদস্য না হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন। যদিও প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এখনও মুখ খুলেননি সাবেক ওই দুই আমলা।

বিএনপি থেকে সিলেটে অনেকে প্রার্থী হওয়ার অভিলাস ব্যক্ত করলেও জিয়া পরিবারের কেউ এই আসনে এলে তাকে স্বাগত জানাবেন দলের নেতাকর্মীরা।

এ আসনে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের। তবে তিনি বাংলাদেশের ভোটার না হওয়ায় প্রার্থী হওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

দলীয় সূত্র জানায়, জিয়া পরিবারের কেউ না এলে এই আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী বা দলের পদত্যাগী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিনকে প্রার্থী দেওয়া হতে পারেন-এমন গুঞ্জন রয়েছে।

অবশ্য ‘নতুন মুখ’ হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে প্রার্থী হতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মোক্তাদির, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী এবং জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও জিয়া পরিষদ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডা. আরিফ আহমদ মোমতাজ রিফা। ফলে এ আসনে নতুন কেউ প্রার্থী হতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

এদিকে জাপা একক নির্বাচন করলে ৩শ’ আসনে প্রার্থী দেবে। এক্ষেত্রে স্বয়ং জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানান দলের নেতারা।  

কেননা, সিলেটকে দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে মূল্যায়িত করে থাকেন এরশাদ। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী মোর্চায় গেলে সিলেট ও রংপুরে বেশি আসন দাবি করবে বলেও জানিয়েছেন জাপার নেতারা।

জাপার কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না হলে জাপার প্রার্থী থাকবে সিলেট-১ আসনে। এছাড়া জোটের কাউকে দেওয়া হবে না। এরপরও নিশ্চিত হতে আরো দু’তিনদিন সময় লাগবে বলেন তিনি।

জেলা জাপার সদস্য সচিব উছমান আলী বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী মোর্চা হলে সিলেট ও রংপুরে বেশি আসন চাইবে জাপা। আর একক নির্বাচন করলে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের প্রার্থী হবেন।

মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হুসেইন, মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে আমরা জিয়া পরিবারের কাউকে আশা করছি। এতে দলের চেয়ারপারসন, তারেক রহমান বা তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এলেও স্বাগত জানাবো। এছাড়া দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এবং দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। দলের অনেক নেতাই মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সকলের আছে। তবে নেতাকর্মীদের পছন্দ দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ।

তিনি বলেন, যেহেতু সিলেট-১ আসন মর্যাদাপূর্ণ। তাই এখানে প্রার্থীও হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও মহানগর সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, আওয়ামী লীগ একটি গঠনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে চলে। মনোনয়ন বোর্ড ও সভানেত্রী ছাড়া এটি বলার এখতিয়ার কারো নেই।  

তারপরও বলতে পারি, দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রতিটি আসনে যার জন সম্পৃক্ততা বেশি আছে, তাকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। নেতাকর্মীরাও নেত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন।

তিনি বলেন, অক্টোবরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা হবে, এমনটি আভাস দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে কেউ নিজের পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা করলে তা ব্যক্তিগত মত, দলের নয়।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান বলেন, তার ব্যক্তিগত মতামত, মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ড. একে আবদুল মুমেন মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। কেননা, তিনি সবদিকে যোগ্য একজন প্রার্থী।

এছাড়া ড. ফরাস উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে। তিনি বলেন, নির্বাচন করলে হবিগঞ্জে করবেন। আর নেত্রী যদি দেন তাহলে সিলেটে করতে পারি। এছাড়া ছহুল হোসেনের ব্যাপারে তিনি বলেন, তার বেসিক স্ট্যান্ড নেই। নেতাকর্মীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। এরপরও সব সিদ্ধান্ত বর্তায় দলের নেত্রীর উপর। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন, তাকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।