ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আওয়ামী লীগ

নেতা হতে চাইলে মানুষের কাছে যান: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
নেতা হতে চাইলে মানুষের কাছে যান: শেখ হাসিনা ছবি: পিআইডি

ঢাকা: নেতা-কর্মীদের মানুষের কাছে গিয়ে আস্থা অর্জনের পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ইলেকশন করতে চান, ভোট চান, সংগঠন করতে চান, নেতা হতে চান তো আগে মানুষের কাছে যান।’

রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে গণভবনে একুশতম জাতীয় সম্মেলনে পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান জেলা নেতারা। সে সময় তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘ইলেকশন করতে চান, ভোট চান, সংগঠন করতে চান, নেতা হতে চান, তো আগে মানুষের কাছে যান। মানুষের কি সমস্যা আছে দেখেন। মানুষের জন্য কি করতে পারেন, করেন, তাহলে মানুষই আপনাদের সব সুযোগ করে দেবে। আপনাদের কারো কাছে গিয়ে ধরনা দিতে হবে না। ’

জনগণের আস্থা ধরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একবার এমপি হয়ে গেলে অনেকে পরের বার জিততে পারে না। কেন পারে না? কারণ সে জনগণের আস্থাটা ধরে রাখতে পারে না। ’
 
তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থাটা ধরে রাখতে হবে। আপনাকে যে ভোট দিল, আপনি যে এমপি হলেন- আর যদি মনে করেন এবারই হইছি, যা পারি বানায়ে-বুনায়ে খাইয়ে বসে থাকি। অনেক টাকা হলে জিতে আসব। সেটা কিন্তু হয় না। ’
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারেক জিয়া গর্ব করে বলতো ২ হাজার কোটি টাকা যদি সে বানাতে পারে তবে জীবনেও কেউ বিএনপিকে হারাতে পারবে না। তো ২ হাজারের জায়গায় ৫ হাজার কোটি টাকা বানায়েও কিন্তু থাকতে পারেনি। ৫ হাজার কোটি টাকার ওপর বানিয়েছে তারা। ক্ষমতায় কিন্তু থাকতে পারে নাই। তাদের দুর্নীতি, তাদের সন্ত্রাস, তাদের জঙ্গীবাদ, আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিভীষিকার কথা মানুষ ভুলে নাই। ’ 

‘তাদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন সবকছু মিলিয়েই ইমার্জেন্সী আসে। পরে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল। ’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইলেকশন জেতা কিন্তু আলাদা। অনেক বড় নেতা আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, আর ভালো ভালো স্লোগান দেয়, আমি বড় নেতা, আমি জিতে যাবো। নির্বাচনটা কিন্তু তা নয়। এটা আমি সব নেতাদের বলি। মনোনয়ন না পেলে মন খারাপ করেন, ঘটনা সেটা না।  এটা কিন্তু অংকের মতো হিসাব করে বের করা যায় কার পজিশন কি। আমরা এখন কিন্তু সেটাই করি। এবারের নির্বাচনে আমরা কিন্তু তাই করেছি। '
 
‘কে মানুষের কাছে বেশি যেতে পারছেন, কে মানুষের বেশি আস্থা অর্জন করতে পারছেন, কে ভোট আনতে পারবেন এটা একেবারে অংকের মতো হিসাবের ব্যাপার। নির্বাচন করাটা একটা অংকের মতো হিসাব। ’

সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশটা যে আওয়ামী লীগই উন্নতি করে সেটা প্রমাণিত। এটা মানুষের কাছে গেছে। ’

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা বার বার জনগণের কাছে তুলে ধরতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা খুব উন্নয়ন করেছি বলেই সবাই ঢেলে ভোট দিবে তা না। মানুষের চাওয়ার কোনো সীমা থাকে না। যত পাবে তত চাইবে। এটা মাথায় রাখতে হবে। ’
 
‘মানুষ সুখ পেলে দুঃখের কথা ভুলে যায়। আর সুখটা যে কারা দিল সেটাও মনে রাখতে চায় না। সেই কারণে তাদেরকে বার বার স্মরণ করাতে হবে। বলতে হবে- আজকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসেছে সেটা আওয়ামী লীগ করেছে। ’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন করে যাচ্ছি সে কথা মানুষকে বার বার বলতে হবে। এটা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা বিভিন্ন জেলা, বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। এটা আপনাদের দায়িত্ব- মানুষকে বলে দিতে হবে যে আপনাদের জন্য আমরা এ কাজ করেছিল। আগে ছিল না, এখন হয়েছে। ’
 
নিজ নিজ এলাকার নিঃস্ব মানুষকে খুঁজে বের করতে আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমাদের দারিদ্র্যের হার আজকে ২০ ভাগে নেমেছে। আমি তো মনে করি আমরা সবাই যদি উদ্যোগ নিই- আমাদের নেতা-কর্মীদের বলবো আপনাদেরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যে আপনার এলাকায় কয়টা লোক দরিদ্র আছে। কয়টা লোক ভূমিহীন আছে নিজেরাই খুঁজে বের করে বলেন, আমাদেরকে দেন। দল হিসেবে এটা আমাদের একটা কর্তব্য। আমরা করতে পারি, আমাদের দলই পারে। ’

‘আমরা তাদের ঘরবাড়ি করে দিতে ও থাকার ববস্থা করে দিতে পারি। সবই করে দিতে পারি। আমাদের তরফ থেকে উদ্যোগটা থাকতে হবে। তাহলে আর দারিদ্র থাকবে না। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বসে সব করবে তা না, আমাদের নেতোদের যদি একটু সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে, খু্ব দ্রুত আমরা এই দারিদ্র বিমোচন করতে পারবো। যেটা আমি বিশ্বাস করি। ’

এসময় ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন রকম বাধা, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সংগঠনকে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,  ‘আমি এই কথাটা বার বার বলি, কারণ অনেকেই ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিএনপি এত কম আসন পেল! অথচ বিএনপি তাদের মেয়াদ পেরিয়েই ২০০৮ সালের নির্বাচনে পেল ২৯টি আসন। আবার বিরোধী দলে থাকতে আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানো এবং মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করলো। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে বিএনপি’র মানুষের ওপর সেই অত্যাচার-নির্যাতন-দুর্নীতি,সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং জনগণের সেই বিভীষিকাময় অবস্থা-এত কিছুর পরে তাদের জনগণ ভোটটা কেন দেবে? আর তারাতো নির্বাচনে জয়লাভের জন্য নির্বাচন করেনি, মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। আসন প্রতি দুই-তিনটা করে মনোনয়ন দিয়েছে।

‘এনাম আহমেদ চৌধুরী এবং মোরশেদ খানের মতো বিএনপির নেতার কাছ থেকেও লন্ডনে অবস্থানকারী তারেক রহমান অর্থ দাবি করেছে, সে অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। ’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘লন্ডনে বাণিজ্য, পুরানো পল্টনে বাণিজ্য, গুলশানে বাণিজ্য-তিন বাণিজ্যে তিন রকম প্রার্থী দিয়ে তারা গো হারা হেরে এখন গালি দেয় আমাদেরকে। তারা অপপ্রচার চালায় আর কিছু কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একথাই বলার চেষ্টা করে। ’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আমল থেকে যে এদেশে গুম, খুন, হত্যা ,নির্যাতন শুরু- তা যেন অনেকেই ভুলে গেছেন। এই কথাগুলো আমাদের মনে রাখা উচিত এইজন্য যাতে করে ভবিষ্যতে আমাদের আর ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০
এমইউএম/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।