মাস শেষে এক থেকে দেড় হাজার রিয়াল আয়। যা বাংলাদেশি টাকায় ২২ হাজার টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা।
এখানে বাংলাদেশিরা যে জায়গাটিতে থাকেন সেটির নাম নাজমা। এখানকার দোকানদার, কুলি, ক্রেতা, রেস্টুরেন্ট সবই বাংলাদেশি। শনিবার বিকেলে ইসলামিক ব্যংকের সামনে কথা হয় সোলায়মানের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা যারা কম টাকা পাঠাই, তারা হুন্ডিতে ইপাঠাই বেশি। আর দ্রুত টাকা পাঠাতে হলে বিকাশে। এখানে বিকাশও আসলে হুন্ডির মতোই।
কাতারের জনসংখ্যার সাত ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশি, যা সংখ্যায় সাড়ে তিন লাখের মতো বলে ধারণা করা হয়। এদের বেশিরভাগই নির্মাণশ্রমিক। অনেকেই আবার একেবারেই অশিক্ষিত। ফলে তারা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একেবারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না বলেও জানান। রুহুল আমিন নামে একজন নির্মাণশ্রমিক ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের হ্যাঁপা তুলে ধরে বলেন, ব্যাংকে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হয়। নাম লিখতে হয়। লাইন ধরতে হয়। এর চাইতে পরিচিত লোকের মাধ্যমে (হুন্ডিতে) টাকা পাঠানোই ভাল।
এই শ্রমিকরা অনেকেই জানেন না হুন্ডির প্রক্রিয়াটি অবৈধ এবং অনিরাপদ।
শফিকুল নামে একজন খুদে ব্যবসায়ী বললেন, ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে এক রিয়ালের দাম পাওয়া যাচ্ছে ২২ টাকা ১৭ পয়সা। অথচ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে এক রিয়ালের দাম পাওয়া যাচ্ছে ২২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা। তাহলে স্বাভাবিকভাবেইতো মানুষ হুন্ডির দিকে ঝুঁকবে!
প্রভু মানি ট্রান্সফার-এ বাংলাদেশ ডেস্কের ক্যাশিয়ার লক্ষ্মীপুরের জাহাঙ্গীর আলম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মাসের প্রথম দিকে মানুষের ভিড় থাকে। দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ জন দেশে টাকা পাঠান। আর মাসের এই সময়টায় (২১ তারিখ) দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ জন আসেন। ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দেশে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, এখানে রিয়াল জমা দিলে প্রবাসীদের স্বজনরা দেশে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করেন। টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটি নিরাপদ। তবে বাংলাদেশিরা ব্যাংকের তুলনায় হুন্ডিতে ঝুঁকে আছেন। তবে দেশে ডলারের দাম কমে গেলে আবার মানুষ ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারণ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ততোটা কম রেটে টাকা হাতবদল করতে পারে না।
জাহাঙ্গীর বলেন, এখন হুন্ডির তুলনায় প্রতি এক হাজার রিয়ালে ব্যাংক ট্রান্সফার করলে ৪০ থেকে ৫০ রিয়াল কম পাওয়া যায়। এর মধ্যে সার্ভিস চার্জ রয়েছে। তাহলে কষ্টের টাকা শ্রমিকরা লস করতে চাইবে কেন!
দোহায় কর্মরত আরেকজন ব্যাংক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, যদি ব্যাংকের সার্ভিস চার্জটা বন্ধ করা যায়, বৈধ পথে অর্থ পাঠানো যে অধিক নিরাপদ সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা গেলে মানুষ ব্যাংকের মাধ্যমেই টাকা পাঠাবে। হুন্ডি বন্ধ করা সহজ নয়, একমাত্র টাকার রেট বাড়ানোই হচ্ছে সহজতর উপায়। মানুষ যদি ব্যাংকেই ভাল রেট পায়, সার্ভিস চার্জ না লাগে, তাহলে কেউই হুন্ডিতে টাকা পাঠাবে না।
জাহাঙ্গীর বলেন, হুন্ডি আমাদের চারিত্রিক দোষও বলা যায়। কারণ নেপাল বা পাকিস্তান বা এখানে কর্মরত অন্য দেশের মানুষরা জানেই না হুন্ডি কি! তারা ব্যাংক ছাড়া টাকা পাঠানোর কথা চিন্তা করতে পারেন না। তবে হুন্ডি ও ব্যাংকে টাকার রেটের পার্থক্য না কমালে অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ প্রেরণ বন্ধ হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
এমএন/জেএম