নিজের রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে বাংলানিউজকে এভাবেই বলছিলেন মালয়েশিয়ায় সফল বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এসএম রহমান পারভেজ। ৪৬, তেংকাট তং শিংয়ে তার রেস্টুরেন্ট রসনা বিলাস।
রাতের কুয়ালালামপুর মানেই বুকিত বিনতাং। রাজধানী শহরের জমজমাট এলাকা। স্ট্রিট ফুড, বার, নাইট ক্লাবসহ পর্যটকদের জন্য মাস্তির সেরা জায়গা এটি। পাশেই গড়ে উঠেছে সব চার তারকা পাঁচ তারকা মানের হোটেল। বড় কয়েকটি শপিংমলও কাছাকাছি দূরত্বে। এখানকার অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিদের আধিক্য। বাংলাদেশ থেকে কেউ ঘুরতে এলে থাকার জন্য তার প্রথম পছন্দ থাকে বুকিত বিনতাং। সব মিলে এমন একটি জায়গায় রসনপ্রিয় বাঙালির জন্য সোনায় সোহাগা রসনা বিলাস।
২০০৮ সালে মরক্কো-বাংলাদেশি ফুড দিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন পারভেজ। নাম দেন কাসাব্লাঙ্কা। কিন্তু বেশিদিন চালাননি। ২০১৩ সালে খোলেন রসনা বিলাস। নিজে ভালো রান্না করেন, বোঝেন, আবার বাজারও করেন। নিজে গিয়েই কেনেন ২০-২৫ কেজি ওজনের মাছ, হরিণ। হরিণের মাংস রসনা বিলাসের বিশেষ আকর্ষণ। বৈধভাবেই এখানে হরিণের মাংস বিক্রি হয়। সরকারি ফার্ম থেকে কেনা হরিণে মাংস খেতে ভিড় জমান শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
কিন্তু শুরুটা কীভাবে? আড্ডাবাজ পারভেজ একসময় খেয়াল করেন এ এলাকায় বসে আড্ডা দেওয়ার ভালো জায়গা নেই। আর আড্ডার সঙ্গে যদি কোনো ব্যবসা দাঁড় করানো যায় তাহলে প্রমোট করা হবে বাংলাদেশকেও। একই সঙ্গে কাজ পাবেন দেশের মানুষ। এসব ভাবনা থেকেই খোলামেলা পরিবেশে শুরু করেন রসনা বিলাস। রেস্টুরেন্টের বাইরে রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রয়েছে ছাউনি। তবে কোনো দরজা জানালা নেই। খোলা থাকে সবসময়। আর প্রকৃত বাঙালি স্বাদের খাবার পরিবেশনে নিত্য যোগ হচ্ছে নতুন সব আইটেম।
১৮ আইটেম দিয়ে শুরু করলেও এখন সাজানো থাকে ২৮টি আইটেম। পারভেজ জানাচ্ছিলেন, গরুর বট যে খাওয়া যায় সেটা মালয়েশিয়ায় রসনা বিলাস চালু করেছে। মালয়েশীয়রা এখন বট খায়। কোয়েল পাখির মাংস খাওয়ার সিস্টেমও পরিবর্তন করেছে এ রেস্টুরেন্ট। বরিশাল, সিলেট, নোয়াখালীর চারজন শেপ দিয়ে শুরু হয় রসনা বিলাস। কাজ করেন ২০ জনের বেশি বাংলাদেশি। তাদেরও আন্তরিকতার কমতি নেই। তাই বলে কাস্টমার কিন্তু শুধু বাংলাদেশিরা না, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিনো, ইউরোপিয়ানরাও এখানে আসে বাঙালি খাবারের স্বাদ নিতে। মোটামুটি রসনা বিলাস দেশকে প্রমোট করার চেষ্টা করছে।
মালয়েশিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র লঙ্কাউইতেও রসনা বিলাসের একটি শাখা খোলার চিন্তা করছেন পারভেজ। সে দিকে কাজও এগিয়েছে অনেকটা। জনপ্রিয় এ পর্যটন এলাকার খাবারের জগতেও রসনা বিলাস ধাক্কা দেবে বলেই আশা তার।
রসনা বিলাসে পাওয়া যায় সব ধরনের শাক-সবজি, ইলিশ, রুই, কাতল, টেংরা থেকে সব ধরনের ছোট বড় মাছ, হরিণ, গরু, মুরগি, কবুতর, কোয়েলের মাংস, বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, চা, কফিসহ হরেক পদের খাবার-পানীয়। চাইলে বাসায় বসে অর্ডার করার সুযোগও রয়েছে। বিভিন্ন পার্টি, বড় অনুষ্ঠানের অর্ডার করা যায়। বাংলাদেশ হাইকমিশন, সেলকম, বিভিন্ন স্টুডেন্ট অ্যাসেসিয়েশনের অনুষ্ঠানে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করে এ রেস্টুরেন্টটি। +60321103365 /+60169933884 নম্বরে ফোন করে অর্ডার করতে পারেন যে কেউ।
মালয়ী খাবার মসলার গন্ধে অনেক সময় ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে ওঠেন পর্যটকরা, বিশেষ করে বাংলাদেশিরা। তাদের সে অসুবিধার ত্রাতা হয়ে দেখা দেয় রসনা বিলাস। আরও বাঙালি রেস্টুরেন্ট পরে গড়ে উঠলেও রসনা বিলাসকে এখনও ছাড়াতে পারেনি কেউ। প্রতিটি খাবারেই রয়েছে ভিন্নতা। আর দামও কিন্তু বেশি নয়। ৮ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত=২০ টাকা) হলেই একজনের দুপুর রাতের খাবার হয়ে যায়। আর বিশেষ আকর্ষণ হরিণের মাংস বিক্রি হয় হয় ৩০ রিঙ্গিত প্রতি প্লেট।
যে কর্মীরা সারাবছর কাজ করেন বাড়ি যাওয়াসহ বিভিন্ন অসুবিধায় পাশে দাঁড়ান পারভেজ। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন তার কর্মীরা ভালো থাকলে তিনিও ভালো থাকবেন। ভালো থাকবে রসনা বিলাস।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৭
এএ/