ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লন্ডন

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করবে ফ্রান্স

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করবে ফ্রান্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

প্যারিস, ফ্রান্স থেকে: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদসহ দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘসহ আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে অবদান রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) প্যারিসের এলিজি প্যালেস ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে যোগ দিতে প্যারিস সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।

শহীদুল হক জানান, প্রেসিডেন্ট প্যালেসের বাইরে এসে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

বৈঠকে ৫টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পবির্তনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়।

ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রোহিঙ্গা সংকটের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চেয়ে বলেন, সংকট মোকাবেলায় আপনি কি করছেন এবং আমরা কি করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন এক মিলিয়নের (দশ লাখ) ওপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশ রয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধরনের বোঝা এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দুর্যোগ।  

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ৫ দফার কথা পুনরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ দফা বাস্তবায়নের মধ্যেই সমাধান নিহিত।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দ্বিপাক্ষিক সমাঝোতা হয়েছে। কিন্তু আমরা চাই আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও চাপ অব্যাহত থাকুক। এটা না করলে দ্বিপাক্ষিক এ সমঝোতা বাস্তবায়ন করা যাবে না।

এ সময় উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রোহিঙ্গা সংকটের পুরো বিষয়টি ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে ব্রিফ করেন।

মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরে সংকট সমাধানে অবদান রাখবেন জানিয়ে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট বলেন, এ সমস্যার যাতে একটা স্থায়ী সমাধান হয়, সে বিষয়ে কাজ করবো।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, ১৯ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা সংকট সমাধান বিষয়ে মিয়ানমারের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিনিধি দল আসতে পারে। দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করতে।

সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা সফলতার সঙ্গে এ সমস্যার সমাধান করে যাচ্ছি। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। এর বিরুদ্ধে সবাইকে অব্যাহত ভাবে কাজ করে যেতে হবে।

এরপর জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এসময় জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান।

২০১৫ সালে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সই হয়। এর দুই বছর পূর্ণ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) এলিজি প্রাসাদে এ সম্মেলন মিলিত হচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নেতৃত্ব অভাব ও একটা হতাশা তৈরি হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এর আহ্বানে বিশ্ব নেতারা এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ‘গ্লোবাল ফেক্ট ফর এনভারনমেন্ট’ নামে একটা মিটিং ডেকেছিলেন সেখানেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো।

তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন আমি আসার জন্য ধন্যবাদ দেয়ার প্রয়োজন নাই। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আপনি নেতৃত্ব দিন।

সবাইকে নিয়ে একটা অ্যাকশন অরিয়েন্টেড রোড ম্যাপ করার জন্য এ মিটিং ডাকা হয়েছে বলে বৈঠকে জানান ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যে বড় ধরনের হুমকিতে রয়েছে সেটি উল্লেখ করেন।

নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ফান্ড তৈরি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

দুই নেতার আলোচনায় জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার ও পারস্পরিক সহযোগিতার কথা উঠে আসে।

দুই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সর্ম্পকের কথা আলোচনায় উঠে আসে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোন কোন সেক্টরকে আপনি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন, যেখানে ফ্রান্স বিনিয়োগ করতে পারে।  

জ্বালানি, অবকাঠামো, ওষুধ, তথ্য প্রযুক্তি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সম্ভবনার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।  

ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে একটি যৌথ বিনিয়োগ কমিশন করার প্রস্তাব দেন। দুই নেতা যৌথ বিনিয়োগ কমিশন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।

ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ও দেশটির জনগণের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের উৎসাহ ও আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তবে সময় নির্ধারণ করা হয়নি।  

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই নেতার আলোচনা খুব হৃদ্যতাপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়।

আলোচনা শেষে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন।

দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
এমইউএম/টিসি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।