তামিম ও লিটনের প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমার দু’জন খেলোয়াড়ের খেলা ভালো লাগে, বিরাট কোহলি আর লিটন দাস। লিটন অনেকে ভালো খেলে, ভালো খেলোয়াড়।
আর তামিম অবশ্যই ভালো খেলোয়াড়। সে রান করছে। সাত হাজার রানের ক্লাবে পৌঁছেছে। আসলে খেলাটা এমন যতক্ষণ ভালো খেলবেন ঠিক আছে। খারাপ খেলবেনতো অনেক কথা হবে। আমি মনে করি, যারা ফর্ম ধরে রাখছে, তারা ব্যাট করবে।
অধিনায়ক হিসেবে টিমকে যে স্থানে রেখে গেছেন, আগামীতে কোনো স্থানে দেখতে চান-এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, এখন যারা তরুণ খেলোয়াড়। আমার মন বলছে, আমার বিশ্বাস পরবর্তী বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলবে। আর না খেলার কোনো কারণ দেখি না। এখন যারা ইয়াং প্লেয়ার, তাদের লাইফের পিক টাইম থাকবে সে সময়।
নিজের ৫০তম জয় দিয়ে অধিনায়কত্ব শেষ করা মাশরাফি নতুন অধিনায়ককে কীভাবে দেখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিডারশিপ বিষয়টি ভালো। কিন্তু ক্যাপ্টেন্সি চাওয়াটা স্বার্থপরতা চলে আসে। আমি মনে করি না ক্যাপ্টেন্সি চাওয়ার প্রয়োজন আছে। যারা চাইছেন, তারা ক্যারিয়ারটা বেশ বড় করতে পারেনি। লিডারশিপ ও ক্যাপ্টেন্সি আলাদা বিষয়। একজন অধিনায়কের প্রচুর কাজ। খেলোয়াড়দের খুবই ডিস্টার্ব হয় পারিবারিকসহ বিভিন্ন দিক থেকে। যেটা ওর পছন্দ না, সেটা বারবার সামনে আসতে পারে। কোচের সঙ্গে সমন্বয় না হতে পারে। ফিটনেসে সমস্যা থাকতে পারে। সেসময় একজন অধিনায়ক পাশে থাকা। পুরো টিমের দায় দায়িত্ব নেওয়া। যে যতোই খারাপ করুক, খারাপ বলুক। অধিনায়ক সবসময়ই এটা কাঁধে নিচ্ছেন।
একজন সফল অধিনায়ক হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অধিনায়কত্বের মূল কারণ ৫০টা জয়ই। তাছাড়া নিজেকে কখনও আলাদা করে মূল্যায়ন করিনি।
অধিনায়ক হিসেবে সাংবাদিকসহ এ অঙ্গনের সঙ্গে জড়িতদের একটু দূরে গেলেই মিস করি। অন্যদেশে মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব থাকে। সেটা আমাদের মধ্যে নেই। পেশাদারিত্ব ঠিক রেখে কাজে এগিয়ে যাওয়া এটাইতো নিয়ম। নতুনদের সঙ্গেও এরকম সম্পর্কে এগিয়ে যাবেন।
সিলেট থেকে অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়ে মাশরাফি বলেন, সিলেট হলেও এটা আমার দেশতো, আমার দেশই। সিলেট, ঢাকা আর খুলনা বা চট্টগ্রাম বলেন। দেশের মাটিতে অধিনায়কত্ব শেষ করেছি, এটাই আনন্দের। এর আগেও বলেছি সিলেটের মাঠ সুন্দর। আশাকরি, সিলেটে সবসময় খেলা হবে। এতো সুন্দর মাঠে অনেক খেলা হবে।
টিম ম্যাটদের জন্য কোনো বার্তা আছে কিনা? এ বিষয়ে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল ম্যাচ জেতা। ম্যাচটা হারলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যেতে পারতো।
শেষ ম্যাচে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ব্যতিক্রম কিছু ছিল কিনা, এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছিল, ভুল না করি। নিজের শেষটা ঠিকমতো করার চেষ্টা করেছি।
পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এবং নিজের পারফরমেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিগত দিনে খুব খারাপ সময় গেছে। সেখান থেকে কিছুটা ঘুরতে পেরেছি। ইউকেট পাচ্ছি। আর পরবর্তীটা পরবর্তীতে বলা যাবে-বলেন মাশরাফি।
অধিনায়ক হিসেবে নতুন যিনি আসবেন, তার চিন্তা চেতনাকে তিনগুণ বেশি বাড়াতে হবে। কেননা, জেতা অনেক সহজ। হারলে বোর্ড, মিডিয়া সবকিছুকে ক্যারি করতে হবে।
নেতৃত্ব ছাড়লেও খেলোয়াড় হিসেবে মোস্তাফিজ-আলামিনদের ভিড়ে নিজের জায়গা করে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই খেলে জায়গা করে নিতে হবে। আর অধিনায়কত্ব বড় একটি চাপও। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করাটাই চাপের। আমি যখন খেলোয়াড় হিসেবে থাকবে, তখন নিজেকে নিয়ে ভাবার অনেক সুযোগ থাকবে। তাই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া আমার খেলার জন্য ভালো হয়েছে।
মিডিয়াকে কখনও প্রতিপক্ষ মনে হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী অধিনায়ক বলেন, মিডিয়া যা দেখছে, তাই লিখছে। মাঝে কিছুটা পর্যবেক্ষণ আছে। তবে একজন মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, শাকিব বানানোর পেছনে মিডিয়ার অনেক অবদান। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
কোন কোচের সঙ্গে কাজ করতে সাচ্ছন্দবোধ করতেন এমন প্রশ্নে মাশরাফি বলেন, এ ক্ষেত্রে হাতুড়ে সিং কে প্রথমে রাখবো। কেননা, তিনি বাংলাদেশকে একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে।
আর নতুন কোচ যিনিই আসুক। তিনি যদি এক্সরেরিমেন্টে করেন, তবে তা বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো হবে না। এক্সপেরিমেন্ট গুড। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেনো এক্সপেরিমেন্টে আটকে না যায়।
সবশেষে বৃষ্টির দিনে মাঠে এসে খেলা দেখা ও সাপোর্ট দেওয়ার জন্য দর্শকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। বিদায় লগ্নে সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত শত সংবাদকর্মীকে করতালির মাধ্যমে তার প্রতি শুভ কামনা জানান। শেষবারের মতো তাকে ঘিরে অটোগ্রাফ নেন সংবাদকর্মীরাও।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২০
এনইউ/ওএইচ/