শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোরে সুজো থেকে ২০০ কিমিলোটার দূরে সুজিয়ানার পথে রেলে। সড়কপথ তখনও খোলেনি।
ভোরে যান্ত্রিক ‘বরফ কাটার’ দিয়ে তুষার সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুই ঘণ্টার যাত্রা শেষে সুজিয়ান স্টেশনে নামা মাত্রই দেখা গেলো সাদা পেজা তুলোর মতো হয়ে আছে চারপাশ। তুষার কেটে পথচলা শুরু।
আশপাশে কোনো গাছপালার পাতা দেখা যাচ্ছে না। সব তুষারাবৃত। রাতে এখানে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০। রোদ ওঠায় এখন একটু একটু করে বরফ গলতে শুরু করেছে। কিন্তু বরফের যে অবস্থা সারাদিনেও গলা শেষ হবে না। সন্ধ্যা থেকে আবার বরফ নতুন করে জমাট বাঁধা শুরু করবে।
চীনের যে শহরে বরফ উৎসব হয়, সুজিয়ান তার থেকে কম নয়। এখানে বরফ গাছে গাছে ছড়িয়ে পুরো সিটিকে শুভ্রতায় সাজিয়ে দেয়। বরফের আড়ালে পড়ে গেছে পাতাহীন বৃক্ষরাজি আর বনসাই।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, বরফ ঢেকে দিলেও গাছের যত্নে কমতি নেই। সব গাছ একই সমান উচ্চতার। এসব গাছে ঠিকঠাক মতো ট্রিমিং করা। এতো নিয়মিত ট্রিমিং করা হয় যে, একটি পাতাও বেসমান মনে হচ্ছে না। গাছগুলো সোজা দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য লোহার টুকরো দিয়ে কোমর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এমন একটি গাছও নেই যে গাছে এমন যত্ন নেওয়া হয়নি।
এ সিটিতে সড়ক মেরামত ও নির্মাণের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়। এসবের খোঁজে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সিইও আবেদ মনসুর। তিনি বনানী বিমানবন্দর সড়কের ডিজিটালাইজেশন ও সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা ও অর্থায়নকারী।
আগেও কয়েকবার আবেদ মনসুর চীনের এ শহরে এসেছেন। এ শহরের বরফময়তা দেখে তিনিও মুগ্ধ। ট্রেনের জানালা দিয়ে আসার পথে তার চীনা সঙ্গী জিমি রাউ এসব দেখাচ্ছিলেন। একই সঙ্গে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন কীভাবে আগাগোড়া মুড়িয়ে থাকতে হবে। কারণ তাপমাত্রার এ অবস্থায় একটি দু’টি নয়, সবার গায়েই ৬-৭টি ভারী পোশাক।
সতর্কাবস্থায় সুজিয়ান নেমেই বরফ খেলা শুরু। এটাই প্রথম বরফ দর্শন বলে বেশ উত্তেজিত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া আরও কয়েকজন।
আসার পথে চারজন ছাড়া পুরো ট্রেনে কোনো বাঙালি ছিলেন না। গুয়াংজু, কুনমিং ছাড়া চীনের আর কোথাও বাংলাদেশি নেই তেমন একটা। সুজিয়ানের পথঘাট একের পর এক মেশিনারিজ ইন্ড্রাস্টিজ ঘুরেও বাংলাদেশি বা ভারতীয় কাউকে দেখা গেলো না। তাহলে খাওয়ার মতো রেস্টুরেন্ট এখানে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। অচেনা মেন্যুর সঙ্গে পরিচিত হতে হবে আরেকবার। অচেনা হলেও রান্নার নির্দেশনা দিয়ে রান্না শেষে খাওয়া হলো শিল্প এলাকার ভেতরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৭
এসএ/এএ