ঢাকা: পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম কঠিন চূড়া আমা দাবলাম জয় করলেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী তানভীর আহমেদ শাওন। শনিবার (৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার ‘আমা দাবলাম’ চূড়া তিনি স্পর্শ করেন।
আমা দাবলাম পর্বত আরোহণ শেষে তানভীর আহমেদ শাওন শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে দেশে ফিরেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আলাপ হয় তার সঙ্গে।
এ সময় সরকারি স্বীকৃতি ও প্রণোদনা দেওয়া হলে দেশেও টপ ওয়ার্ল্ড ক্লাস পর্বতারোহী পাওয়া সম্ভব বলে এমন মন্তব্য করেন এই পর্বতারোহী।
পর্বতারোহী তানভীর আহমেদ শাওন বাংলানিউজকে বলেন, পুরো বিশ্বে পর্বত আরোহণ একটি স্পোর্টস হিসেবে স্বীকৃত। যা বাংলাদেশে এখনো টুরিজম হিসেবে বিবেচিত হয়। আমি চাইবো বাংলাদেশেও এটিকে স্পোর্টস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। পাশাপাশি সরকারি পর্যায় থেকে যদি এই স্পোর্টসকে স্বীকৃতি ও প্রণোদনা দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশেও টপ ওয়ার্ল্ড ক্লাস পর্বতারোহী পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশকেও গর্বিত করা সম্ভব হবে।
বাংলানিউজ: পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে আমা দাবলাম পর্বত আরোহী হিসেবে কেমন লাগছে?
তানভীর আহমেদ শাওন বলেন, দেশের জন্য কোনো কিছু করাই গৌরবের। আমার যে ক্ষেত্র, সে জায়গা থেকে দেশের নাম বড় করাটা অনেক বড় গৌরবের বিষয়।
পর্বত আরোহণের জার্নিটা কীভাবে শুরু হলো?
তানভীর আহমেদ শাওন: পর্বত আরোহণের জার্নিটা অনেক আগে থেকে। সবার মতোই আমিও বান্দরবান দিয়ে শুরু করেছি। এর আগে আমি ছোট খাটো তিনটি মাউন্টেন সামিট করেছি। এই আমা দাবলাম মাউন্টেইন আমার চতুর্থ সামিট করা মাউন্টেইন। এই পর্বত অভিযানের পরিকল্পনা করি আমি এ বছরের এপ্রিলের পরে। এই জার্নি আমি শুরু করি ১৩ অক্টোবর নেপালে যাওয়ার মাধ্যমে। আর ৩ নভেম্বর অভিযান শেষ করে আমি বেস ক্যাম্পে ফিরে আসি।
আমা দাবলাম পর্বত আরোহণের সময় কোনো ধরনের ভয় বা শঙ্কা ছিল?
তানভীর আহমেদ শাওন: পর্বত আরোহী হিসেবে ভয় বা শঙ্কা ছিল, এভাবে আমি বলতে চাই না। তবে এই অভিযানটি খুবই রোমাঞ্চকর ছিল। আপনারা জানেন যে আমা দাবলাম পর্বতটি আরোহণ করা খুবই টেকনিক্যাল। মাউন্টেনার হিসেবে এটা আমার জন্য খুব বড় চ্যালেঞ্জের ছিল। তবে আমার খুব ভালো লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার একটি ছোট বাচ্চা আছে দুই বছরের। পর্বত অভিযানের সময় তার কথা আমার সব থেকে বেশি মনে হতো। তবে সকলের দোয়ায় আমি বড় কোনো বিপদের সম্মুখীন হইনি এই অভিযানের সময়। খুব সহজেই এই পর্বত আরোহণ করতে পেরেছি।
এরপর কোনো পর্বত অভিযানের পরিকল্পনা আছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে শাওন বলেন, দেখেন কোনো পর্বত আরোহণের পরই যে পরবর্তী পর্বত হিসেবে মাউন্টএভারেস্টে যেতে হবে এমন চিন্তা করার বাইরে আমি চাইবো যে, এর থেকে বড় কোনো পর্বতে যাওয়ার৷ এবার আমি ৬ হাজার ৮১২ মিটারের এই আমা দাবলাম পর্বত আরোহণ করলাম। এবার চেষ্টা করবো ৭-৮ হাজার মিটারের কোনো পর্বত অভিযানে যাওয়ার। কবে যাব এটা এখনো ঠিক হয়নি। তবে মাউন্টএভারেস্টে যেতে হবে বিষয়টি এমন নয়।
ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স ক্লাব সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ক্লাবটি আমার প্রাণের ক্লাব, এটা আমার ভালোবাসা। এই ক্লাবের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত।
এই পর্বত আরোহণের সময় বহু লোক মারা গেছেন জানার পর এই পর্বত অভিযানে কেমন মনে হয়েছে?
তানভীর আহমেদ শাওন বলেন, এই পর্বত আরোহণের সময় মারা যাওয়ার বিষয়টি কখনো চিন্তায় আসেনি। তবে এটি টেকনিক্যাল একটি পিক। এই অভিযানটি ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। একটি বড় পর্বত আরোহণে যত চ্যালেঞ্জ সব কিছুই এই পর্বতে আছে।
আমা দাবলাম পর্বত আরোহণের কোনো স্মৃতি শেয়ার করতে চান?
তিনি বলেন, যখন পর্বত থেকে নিচে নামছিলাম তখন ক্যাপ ৩ থেকে ক্যাম্প ২ এ নামাটা আমার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। সন্ধ্যায় আলো কমে গেলে অভিযান পরিচালনা অনেক কঠিন ছিল। এই বিষয়টি আমাকে কিছুটা ভয়ের মধ্যে ফেলেছিল।
তিনি আরও বলেন, আগে সব সময় পর্বত অভিযানে যখন যেতাম সঙ্গে পরিচিত কেউ থাকতেন। তবে এবার আমি একা ছিলাম। এটি নতুন অভিজ্ঞতা। আগে বেশির ভাগ পর্বতে আমি বাবরের সঙ্গে গিয়েছিলাম।
আমা দাবলাম পর্বত আরোহণের সময় আবহাওয়া কেমন ছিল?
তানভীর আহমেদ শাওন: সেখানে আবহাওয়া খুবই চমৎকার ছিল। এই আবহাওয়ার বিষয়ে আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাবো পলাশ ভাইকে। উনি দেশের বাইরে থাকেন, উনি আমাদের ক্লাবেরই একটি অংশ। তিনি সবসময় আবহাওয়ার সুনির্দিষ্ট ও সঠিক তথ্য দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন।
কেউ যদি পর্বত আরোহণ করতে চায় তাদের জন্য পরামর্শ কী?
তানভীর আহমেদ শাওন: প্রথমত এই স্পোর্টসে কেউ যদি আসতে চান তাহলে তাকে ফিজিক্যালি ফিট হতে হবে। পাশাপাশি মেন্টালিও শক্তিশালী হতে হবে।
আপনার বেড়ে ওঠা ও এই সেক্টরই আসার বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
তানভীর আহমেদ শাওন: আমি কিশোরগঞ্জের ছেলে। প্রপারে আমার বাড়ি, বেড়ে ওঠা সেখানেই। ছোটবেলা থেকে খেলার প্রতি আগ্রহ অনেক। আমি ক্যাম্পাসে নিয়মিত খেলাধুলা করতাম। ক্যাম্পাসে আমি ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নও ছিলাম। আর ট্র্যাকিং-এ যখন আসি তখন শুধু বান্দরবানের পাহাড় চিনতাম। পরে আস্তেধীরে দেশের বাইরের পাহাড়ে যাওয়া হতো। এভাবেই আমার পর্বত আরোহণের জার্নিটা শুরু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার অব লেদার ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন শাওন। তিনি চান বিশ্বের বড় বড় সব পর্বতে উঠে দেশের নাম বিশ্বের বুকে আরও উজ্জ্বল করতে।
এর আগে ২০২২ সালে ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সেই সেরা সেনানী ডা. বাবর আলী এই যাত্রা শুরু করেন। এরপর ২০২৩ সালে নিশাত মজুমদার এবং কাউসার রুপক ও এই মৌসুমেই তৌফিক আহমেদ তমাল ওই দুর্দান্ত কীর্তি গড়েন। ১৩ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তানভীর।
বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৪
ইএসএস/এসআইএস