ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

একুশে পদক পেলেন চট্টগ্রামের ৩ বিশিষ্টজন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
একুশে পদক পেলেন চট্টগ্রামের ৩ বিশিষ্টজন ড. হরিশংকর জলদাস, ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া ও ড. মাহবুবুল হক।

চট্টগ্রাম: ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, শিক্ষা, ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য চট্টগ্রামের তিন বিশিষ্টজন পেলেন একুশে পদক।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের এ পদক পরিয়ে দেন।

এ তিন বিশিষ্টজন হলেন- ড. মাহবুবুল হক, অধ্যাপক ড. হরিশংকর জলদাস ও ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া।

ড. মাহবুবুল হকের জন্ম ১৯৪৮-এ ফরিদপুরে। বাবার চাকরিসূত্রে চট্টগ্রামে আসা এবং স্থায়ীভাবে বসবাস। সদা প্রগতিমুখীনতা, মানবতাবাদী জীবনবোধ, আধুনিক মননশীলতা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নিরন্তর প্রেরণা জুগিয়েছে তার ব্যক্তি ও কর্মজীবনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনার পাশাপাশি দীর্ঘকাল ধরে কাজ করছেন বাংলা ভাষা নিয়ে। ষাটের দশকে চট্টগ্রামে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির নিরলস কর্মী ছিলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় সংগঠক।

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে এসএসসি, ১৯৬৬ সালে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলায় স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা এমএতে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় হন। এখান থেকেই ড. মনিরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৯৭ সালে। গবেষণার বিষয় ‘তিনজন আধুনিক কবি: সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সুকান্ত ভট্টাচার্য। ’

স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। অষ্টম শ্রেণিতে ‘নবদিগন্ত’, নবম ও দশম শ্রেণিতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল বার্ষিকী সম্পাদনার মাধ্যমে সম্পাদনায় হাতেখড়ি। ১৯৬৪ সালে দ্বিমাসিক সাহিত্যপত্র ‘কলরোল’ সম্পাদনা করেন। এ পত্রিকাতেই একুশের প্রথম আলেখ্য-উপন্যাসিকা ‘লাল রং পলাশ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৭ সালে ‘মিছিল’, ‘অন্বেষা’, ‘পদাতিক’, ‘রবিকরে কবিকণ্ঠ’; ১৯৭৯ সালে ‘সাহসী ঠিকানা’, ১৯৮১ সালে ‘চিটাগাং গাইড’, ১৯৯৫ সালে ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’, ১৯৯৭ ও ২০০১ সালে ‘আজিকে এ আকাশতলে’ সম্পাদনা করেন। আবুল ফজল, আবদুল হক চৌধুরী, ওহীদুল আলম প্রমুখের প্রয়াণ স্মরণপত্রসহ বহু স্মরণিকা ও সংকলন সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

প্রণব কুমার বড়ুয়া : দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া। শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায়ও রেখেছেন অনন্য ভূমিকা।

শিক্ষার প্রসারের জন্য, বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে পদুয়ায় এবং পটিয়ায় দুইটি স্কুল ও দুইটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ডিগ্রি কলেজ, ঢাকার ধর্মরাজি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়া রাউজানে অগ্রসর বালিকা মহাবিদ্যালয়, পটিয়ার করল উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট রাউজান উপজেলার আবুরখীল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া। তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেছেন। একই সঙ্গে এমএ (পালি) এবং বিএড প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পিএইচডি করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়া তিনি ধর্মীয় শিক্ষা পালি সূত্র, আদ্ধ্য, বিনয় আদ্ধ্য, অভিধর্ম আদ্ধ্যর ওপর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক, উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ পদেও কর্মরত ছিলেন। তিনি কানুনগোপাড়া কলেজ, রাঙ্গুনিয়া কলেজ, অগ্রসর বালিকা মহাবিদ্যালয় এবং কুণ্ডেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব ছিলেন। বিশ্ব বৌদ্ধ শান্তি সম্মেলন সংস্থা, এশীয় ধর্ম শান্তি সম্মেলন সংস্থা এবং এশীয় বৌদ্ধ ধর্ম শান্তি সম্মেলন সংস্থার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে আন্তঃধর্মীয় শান্তি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ লিখেছেন। এর মধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বৌদ্ধদের অবদান’ এবং ‘বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থ দুটো প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে। তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে আছে, অতীশ দীপংকর, বৌদ্ধ আচরণবিধি, মহাথেরোকে যেভাবে দেখেছি, পৃথিবীর পথে পথে, গৌতম বুদ্ধের জীবন ও বাণী, শতবর্ষের বৌদ্ধ সাহিত্যিকদের অবদান ও সমাজজীবন। এছাড়া তাঁর লেখা অনেক প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের সাময়িকীতে স্থান পেয়েছে। তিনি টানা দুইবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন।

ড. হরিশংকর জলদাস : অনেকটা পরিণত বয়সে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন ড. হরিশংকর জলদাস। ‘কবিতা ও ধীবর জীবন কথা’ তার প্রথম গ্রন্থ। ডক্টরাল থিসিস ‘নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্ত জনজীবন’। তবে সাহিত্য জগতে তার পরিচিতি কথাসাহিত্যিক হিসেবে। কথাসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। সর্বশেষ পুরস্কার হিসেবে ঝুলিতে যুক্ত হলো একুশে পদক।

হরিশংকর জলদাসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ১২ অক্টোবর। পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্ত জীবন’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ