ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাংলার প্রাণের কাছে

‘আমার ভাইধন রে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা’

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
‘আমার ভাইধন রে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা’

নীলফামারী ঘুরে: ভাদ্র মাসে তাল পাকার পরে বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা-পুলিসহ হরেক রকম পিঠা বানানোর আয়োজন। আর এ সময়টায় হিরিক পড়ে বিবাহিত‍ মেয়েদের বাবার বাড়ি নাইওরের।

পহেলা ভাদ্র বাবার বাড়িতে ‘নাইওর’ বা বেড়াতে আসেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার নারীরা। যা ‘ভাদর কাটানি’ নামে ঢুকে পড়েছে এ অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতিতে।

উত্তরবঙ্গের জেলা নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন অঞ্চলে সব ধর্মের ম‍ানুষই এ লোকাচারটি বেশ ঘটা করেই পালন করেন- জানালেন স্থানীয়রা। তবে কেউ-ই এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারেননি।

নীলফামারী জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, হাজার বছর ধরেই এটি হয়ে আসছে। হিন্দু, মুসলমান সবাই এটি পালন করে থাকে।

‘এভাবেই এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে’।

জানা যায়, এ সময়টায় মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে নাইওর আনতে যান স্বজনরা। জামাইয়ের বাড়িতে পাঠানো হয় নানা জাতের ফল, মিষ্টি, ক্ষীর-পায়েস।

প্রচলিত লোকাচার অনুসারে, ভাদ্র মাসের প্রথম দিন থেকে কমপক্ষে এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্বামীর মুখ দেখবেন না বধূরা।

স্বামীর মঙ্গল কামনায় এমনটা করে থাকেন বলে মিথ রয়েছে। তাই এ সময়টায় বাবার বাড়িতে অবস্থান করে বেশ উৎসব আমেজে থাকেন তারা।

তবে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস বা প্রমাণ দিতে পারেননি স্থানীয় কোনো ব্যক্তি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নীলফামারী জেলা শাখার আহ্বায়ক আহসান রহিম মঞ্জিল বলেন, লোকাচারটি মূলত দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও জয়পুরহাট জেলাতে পালন কর‍া হয় বলে শোনা যায়।

এক সময় গরুর গাড়িতে করে বধূরা নাইওর আসতো। এখন গরুর গাড়ি নেই, তবে নাইওর রয়েছে।

এসময় বিনোদনের মাধ্যম হয়ে ওঠে প্রাচীন সিলক (ধাঁধাঁ বা শ্লোক)। যা বুদ্ধিদীপ্তদের খেলা।

একজন আরেকজনকে ‘অর্ধচন্দ্রে বিন্দুযুত্তু ককারে আকার, পাঠারে ভাসাইয়া দিয়া মধ্য নিবে তার, লবণের প্রথমটি তাহাতে মিশাইয়া, হইবে যাহা দিবে পাঠাইয়া’ ধরনের প্রশ্ন করেন।

বেশ ভেবে চিন্তে এসব ধাঁধাঁ বা সিলকের উত্তর দিতে হতো। এই ধাঁধাঁর উত্তর ‘কাঁঠাল’ বলে জানা যায়।

এ চর্চায় রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত নারীরাও। তবে আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে প্রাচীন সেসব সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে।

এসব সিলকের সংখ্যা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে লোক গবেষকদের মত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষাকালে আগে নৌকায় করে মেয়েরা বাবার বাড়ি যেতেন। শুষ্ক মৌসুমে যেতেন গরুর গাড়িতে। সময়ের ব্যবধানে অনেক পরিবর্তন এসেছে।

‘তবে চলন বিল সংলগ্ন কয়েকটি জেলা ও উত্তর বঙ্গের অন্যান্য জেল‍াতেও মেয়েদের নাইওর যাওয়ার প্রচলন রয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
এমএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ