নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত দৈনিক ‘প্রথম আলো’। শুধু বিরাজনীতিকরণ নয়; অন্ধভাবে ভারতের স্বার্থরক্ষা, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ সম্পাদকীয় নীতির আড়ালে ‘নাস্তিক্যবাদ’ প্রথম আলোর অন্যতম এজেন্ডা।
পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক একজন নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ঘরানার লেখক। পতিত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে আনিসুল হকের গভীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সর্ববিদিত। শেখ রেহানার লুটের টাকায় শেখ মুজিবের জীবনীভিত্তিক ধারাবাহিক উপন্যাস লিখেছিলেন আনিসুল হক। যেখানে নানা বিতর্কিত বক্তব্য আছে। কিন্তু ইসলামকে অবজ্ঞা এবং পবিত্র কোরআনকে বিকৃত করার ভয়াবহ অভিযোগ আছে প্রথম আলো এবং আনিসুল হকের বিরুদ্ধে।
আনিসুল হক ‘প্রথম আলো’র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ‘গদ্যকার্টুন’ লিখছেন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এ লেখাগুলোয় সুস্পষ্টভাবে পবিত্র কোরআনকে অবমাননা করা হয়েছে। আনিসুল হক লিখিত ‘গদ্যকার্টুনে’ ‘ছহি রাজাকারনামা’ একটি অধ্যায় আছে। এতে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মুসলিমের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআন আর বিভিন্ন সুরার আয়াতের অর্থ সরাসরি বিদ্রুপাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আনিসুল হক তার রচনায় পবিত্র কোরআনের আয়াতের অর্থ বিকৃত করে ব্যঙ্গাত্মক অর্থ দিয়েছেন যেমন, পবিত্র কোরআনের প্রথম সুরার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে- ‘সমস্ত প্রশংসা জগতের প্রতিপালক আল্লাহর’। লেখক ছহি রাজাকারনামায় লিখেছেন, ‘সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের’। সুরা ফাতেহার আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই। ’ আনিসুল হক উক্ত আয়াতকে ব্যঙ্গ ও বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা করো, আর রাজাকারদের সাহায্য প্রার্থনা করো। ’ পবিত্র কোরআনের সুরা দুহার ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো। ’ আনিসুল হক উক্ত আয়াতকে বিদ্রুপ করে লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই রাজাকারগণের জন্য অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎকে উত্তম করিয়া সৃজন করা হইয়াছে। ’
পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়, ‘আর তোমরা ভয় করো যে, ইয়াতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পূর্ণ করতে পারবে না; তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে বিয়ে করে নাও দুই, তিন বা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা করো, তাদের মধ্যে ন্যায়সংগত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একজনকেই (বিয়ে করো), অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের (বিয়ে করো)। ’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিপরীতে মুসলিম জাতিকে হেয় ও পবিত্র গ্রন্থকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘সেই ব্যক্তিই উত্তম রাজাকার, যে বিবাহ করিবে, একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি, যেরূপ সে ইচ্ছে করে আর তাহার জন্য বৈধ করা হইয়াছে ডান হাতের অধিকারভুক্ত দাসীদের, আর তাহারা ভোগ করিতে পারিবে বাঙালি রমণীগণকে, তাহাদের সহিত আদল করিবার দরকার হইবে না। স্মরণ রাখিও, মালেগণিমতগণের সহিত মিলিত হইবার পথে কোনোরূপ বাধা থাকিল না। ’
পবিত্র কোরআনের সুরা মুরসালাতের ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়, ‘আমি কি আগের লোকদের (অবিশ্বাসী জালেম) ধ্বংস করিনি?’ আনিসুল হক এ আয়াত ব্যঙ্গ করে লিখছেন, ‘গ্যালিলিও নামের এক পাপিষ্ঠ অতীতে সত্য অস্বীকার করিয়াছিল এবং সে কি প্রাপ্ত হয় নাই চরম শাস্তি। ’ পবিত্র কোরআনের সুরা নাবার ৩১-৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অন্যদিকে পরহেজগার লোকদের জন্য রয়েছে চরম সাফল্য। (তা হচ্ছে) বাগবাগিচা, আঙুর (ফলের সমারোহ), (আরও আছে) পূর্ণ যৌবনা সমবয়সি সুন্দরী তরুণী। ’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তাহাদের জন্য সুসংবাদ। তাহাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছে, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না। ’
এভাবেই কোরআনের আয়াত বিকৃত করে আনিসুল হক আরও লিখেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভু পাকিস্তানের প্রশংসা করো। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু পাকিস্তানিরা ক্ষমতাশীল। ’ আনিসুল হক তার ‘ছহি রাজাকারনামা’ রচনাটির প্রতিটি বাক্যেই পবিত্র কোরআনের বাকভঙ্গি ও কোরআনের বাংলা অনুবাদের ক্লাসিক ভাষা ব্যবহার করে কোরআনের আয়াত ব্যঙ্গ ও বিকৃত করেছেন। প্রথম আলো ও আনিসুল হকের ইসলামবিরোধী অপতৎপরতার জন্য তাকে আইনি নোটিস পাঠানো হলেও তার জবাব দেয়নি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ।
এখানেই শেষ নয়, ২০০৭ সালেও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষীর অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় সারা দেশে এ পত্রিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রথম আলোর কৌতুক ম্যাগাজিন ‘আলপিন’-এর ৪৩১তম সংখ্যায় স্থান পাওয়া একটি কার্টুন নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। প্রকাশিত ওই কার্টুনটিতে একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের সঙ্গে একজন বালকের সংলাপ প্রকাশ করা হয়েছিল। যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি বিদ্রুপস্বরূপ। কার্টুনটির সংলাপ ছিল এ রকম, যখন বালকটিকে তার নাম জিজ্ঞাসা করা হয় তখন সে নামের আগে ‘মুহাম্মদ’ বলেনি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সম্মানার্থে তাদের নামের সঙ্গে ‘মুহাম্মদ’ ব্যবহার করে থাকে। কার্টুনের ওই পূর্ণবয়স্ক মানুষটি ছেলেটিকে সব নামের আগে ‘মুহাম্মদ’ এ শব্দ ব্যবহার করতে বলে। এরপর কার্টুনের সংলাপে যখন ওই লোকটি ছেলেটির হাতে কী জানতে চান তখন ছেলেটি উত্তর দেয় ‘মুহাম্মদ বিড়াল’। যে সংলাপে সরাসরি ‘নবী’ (সা.)-কে বিদ্রুপ করার অভিযোগ উঠেছিল। ২০০৭ সালের ওই সময় ছিল এক-এগারো শাসনামল। দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে প্রথম আলোর এ কার্টুন দেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ কার্টুনের তীব্র প্রতিবাদে সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎকালীন এক-এগারো সরকার ধর্মীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে প্রথম আলোর অনুমোদন বাতিল করার দাবি ওঠে। পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আলপিনের ৪৩১তম সংখ্যাটির বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর সব কপি বাজেয়াপ্ত করে এবং কার্টুনটির রচয়িতা আরিফুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে আলপিন ও মূল পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান তার সম্পাদিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং মুসল্লিদের চাপের মুখে বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবাইদুল হকের হাতে হাত রেখে প্রকাশ্যে ‘তওবা’ করেন।
কিছুদিন আগেও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে রাজপথে মিছিল হয়েছে। পত্রিকাটির অনুমোদন বাতিলের দাবি উঠেছিল। এমনকি এ গণমাধ্যমটির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছিল জনতা। তারা প্রথম আলোকে বিশেষ গোষ্ঠীর ‘দালাল’ বলে অভিহিত করে। এর প্রতিবাদে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জোড়া গরু জবাই কর্মসূচি করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। অন্যদিকে ৩১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ফটকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পুড়িয়ে পত্রিকা দুটি বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে বয়কটের ডাক দিয়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে পত্রিকা দুটির বিপক্ষেও লিখেছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরও প্রথম আলো এখনো পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে। ভারতীয় নীতি বাস্তবায়নকারী এ দৈনিক পত্রিকাটি মনে করছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫