ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

অন্যান্য

আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজে প্লাস্টিক মেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজে প্লাস্টিক মেলা মেলা বিভিন্ন দেশের কোম্পানি তাদের পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে।  ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক এক্সপো-ভিলেজ ‘আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজ বাংলাদেশ’-এ পর্দা উঠল ১৭তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলার।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব মো. আবদুর রহিম খান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক সেক্টরের সঙ্গে যুক্তদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি দেশের প্রায় ১২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান আছে এই সেক্টরে। পাশাপাশি ছয় হাজার প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করে। একই সঙ্গে এই সেক্টর থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির কার্যক্রম পরিচালিত হয়।  

প্লাস্টিক সেক্টর বর্তমানে এক প্রকার আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এই প্লাস্টিকে যেমন ভালো কিছু আছে তেমনি খারাপও আছে। তবে আমাদের যে করণীয় তা হচ্ছে এই ভালো প্লাস্টিককে প্রমোট করা। পরিবেশের জন্য যে প্লাস্টিকগুলো খারাপ তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। একই সঙ্গে পাটসহ অন্যান্য যে সম্ভাবনাময় পণ্য রয়েছে এসবের ব্যবহার বাড়ানো। পাশাপাশি যেসব পণ্য প্যাকেজিং ছাড়া ব্যবহার করা যায়, সেগুলোকে প্যাকেজিং ছাড়াই ব্যবহার করা উচিত।  

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্লাস্টিক আমাদের দেশে গ্রো করছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি আমাদের জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠবে। আজকের মত এমন আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী আমাদের জানাবে যে, এই পণ্যটিকে আরও কীভাবে পরিবেশবান্ধবভাবে উৎপাদন করা যায়। একই সঙ্গে পরিবেশের ওপর দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আরও কীভাবে রিসাইকেলিং প্লাস্টিক ব্যবহার করা যায়।

খারাপ প্লাস্টিককে বন্ধ করবেন এবং ভালো প্লাস্টিকের সঙ্গে থাকবেন জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাস্তবতার ভিত্তিতে আমাদের এমন নীতিমালা তৈরি করা দরকার, যার মাধ্যমে আমরা এই খারাপ প্লাস্টিককে বন্ধ করতে পারব। এই খারাপ প্লাস্টিক প্রতিহত করব এবং ভালো প্লাস্টিকের সঙ্গে থাকব। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই প্লাস্টিকের ব্যবহার করবো।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হয়ে উঠেছে। বর্তমানে প্লাস্টিক ছাড়া কোনো কিছু চিন্তা করা যায় না। মোটামুটি সব কিছুতেই প্লাস্টিক ব্যবহার হয়, এমনকি কাপড় তৈরিতে পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাতটি গাছ কাটা থেকে বিরত রাখতে একটি প্লাস্টিক পণ্য ভূমিকা রাখে। মোটকথা একটি দেশের উন্নয়ন বোঝা যায় প্লাস্টিকের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।  

প্লাস্টিক নিয়ে নানা রকমের প্রোপাগান্ডা চলছে উল্লেখ করে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি বলেন, এই প্লাস্টিক বন্ধ নিয়ে খামোখা ঝামেলা তৈরি করছে কেউ কেউ। প্লাস্টিক ছাড়া চিন্তা করা খুবই কঠিন। সব সেক্টরে এর ব্যবহার আছে। যারা এটি বন্ধ করতে চাচ্ছে তারাও কোনো না কোনোভাবে এই প্লাস্টিকের সঙ্গে যুক্ত। এর সঠিক ব্যবহার সবার জানতে হবে। পরিবেশের জন্য খারাপ হয় এমন প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।  

এই মেলায় দেশি-বিদেশি আট শতাধিক স্টল রয়েছে। এতে স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, জার্মানি, ভারত, ইতালি, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানি তাদের পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে।  

বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) এবং হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইয়োকার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস যৌথভাবে মেলাটির আয়োজন করছে।

এই প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) সুবিশাল এক্সপো ভিলেজে। এক্সপো ভিলেজটির আয়তন ১ লাখ ৩৪ হাজার বর্গফুট। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ বহুমুখী ভেন্যুটিতে একই ছাদের নিচে মেলা, প্রদর্শনী, সমাবর্তন, সেমিনার, এজিএম, কর্পোরেট রিট্রিট, কনসার্ট, বিয়ে, পরীক্ষার হল, বাইক, কার-শোসহ যে কোনো ধরনের ছোট থেকে বড় কর্পোরেট, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান স্বাচ্ছন্দ্যে করা যাচ্ছে। একই ছাদের নিচে এত বড় জনসমাগস্থল বাংলাদেশে আর নেই, যেখানে ১০ হাজার জনেরও বেশি লোক একসঙ্গে সমাগম করা সম্ভব।

আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজ বাংলাদেশ-এ সমাবর্তন ও কনফারেন্সে ১০ হাজার লোক, কনসার্টে ১২ হাজার লোক, বিয়ের অনুষ্ঠানে ৯ হাজার লোকসহ যেকোনো অনুষ্ঠান করা সম্ভব। এই এক্সপো ভিলেজের সঙ্গে রয়েছে সহস্রাধিক গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্স এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। সারাবছরই বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এই এক্সপো ভিলেজটি সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

আইসিসিবির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) এম. এম. জসীম উদ্দীন বলেন, আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শেড। এখানে শুধু এক্সিভিশন নয়, বিভিন্ন ধরনের সমাবেশ, সমাবর্তন, পরীক্ষার হল, মেলাসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। এটি বাংলাদেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বড় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শেড।  

তিনি বলেন, এখানে সুপরিসর ওয়াশরুম ব্যবস্থা রয়েছে, সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের নিজস্ব বৈদুতিক ব্যবস্থা রয়েছে এবং বিকল্প বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে।  

আইসিসিবির চিফ অপারেটিং অফিসার বলেন, এক্সপো ভিলেজে বিভিন্ন ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে টেন্টের চারদিকে রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে মালামাল ওঠানো-নামানোর সুযোগ সুবিধা রয়েছে।  

তিনি বলেন, এই টেন্টটির উচ্চতা অন্যান্য টেন্ট থেকে অনেক বেশি। এর উচ্চতা ১৩ মিটারের বেশি। এ কারণে এখানে যেকোনো ধরনের কাজ করা সম্ভব। এমনকি ক্রেন ব্যবহার করে কাজ করা সম্ভব। দেশের মানুষ যদি কোনো প্রোগ্রাম করতে চায়, তাহলে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম এখানে করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
ইএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।