কুষ্টিয়া: বিষবৃক্ষ তামাকের আবাদ দিনদিন কমতে শুরু করেছে কুষ্টিয়ায়। তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় অফারে বিগত দিনগুলোতে জেলায় তামাক চাষ বেড়েছিল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ৯ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫২২ মেট্রিক টন। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১০ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ৯ হাজার ৯১৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৯ মেট্রিক টন। তবে চলতি মৌসুমে ভুট্টার আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর। যা থেকে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৬২ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদিত হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
তামাক চাষ প্রবণ এলাকা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়ার কৃষক দুলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘আমরা তামাক চাষ করি মূলত একবারে বিক্রি ও টাকা একসঙ্গে পাওয়া যায় এ জন্য। তাছাড়া তামাকে খুব একটা লাভ হয় না। বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা মতো খরচ হয়। বিক্রি করে ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো আসে। ৩-৪ মাস পরিবারের সবাই মিলে কাজ করতে হয়। আবার আমাদের চাইতে ব্যবসায়ীরায় বেশি লাভ করে। গত বছর আমি ৪ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলাম, কিন্তু এবার করিনি। সেই জমিতে সরিষা করেছি।
জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, হিসাব করলে তামাকে খুব একটা লাভ হয় না। পাশের জমিতে তামাক করে তাই তামাক করি। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবার মাঠে তামাক কম। তামাক কোম্পানিগুলো চাষের আগেই সার দেয় কৃষকদের ঋণ হিসেবে। তবে ভুট্টার যে দাম, আর তামাকে যে পরিশ্রম তাই তামাকের চেয়ে ভুট্টার চাষ করা ভালো।
দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি এলাকার কৃষক জিনারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ‘ভুট্টায় তেমন খরচ হয় না। বিঘাপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকার মতো। সেখানে ৪৫-৫০ মণ ভুট্টা পাওয়া যায় এখন। যার বাজার দাম প্রতি মণ ১০৫০-১১০০ টাকা। গত বছর আমি চার বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি করেছি ২ লাখ ১০ হাজার টাকায়। তাই এ বছর আমি ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি।
ভুট্টা চাষী জহুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, কয়েক বছর ধরেই ভুট্টার ফলন বেশ ভালো। আর দামও ভালো। কাঁচা ভুট্টা বিঘাপ্রতি ৫০ মণ এবং শুকনা ভুট্টা ৩৫ মণ ফলন হচ্ছে। তামাকের তুলনায় অর্ধেক পরিশ্রম ভুট্টায়।
মিরপুর উপজেলার আশাননগর এলাকার কৃষক মারুফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করলে বর্তমানে সব খরচ বাদ দিলেও ৪০-৪৫ হাজার টাকা লাভ হয়। গত বছর আমি ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছিলাম। এ বছরও ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। মাঠ থেকে শুধু বাড়ি এনেই কাঁচা ভুট্টা বিক্রি করেছি ১০২০ টাকা মণ দরে।
ভুট্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এই অঞ্চলের ভুট্টা বাইরের ভালো ক্রেতা না পাওয়ায় কম দামে বিক্রি করতে হতো। কিন্তু গত দুই বছর যাবৎ বাইরের ক্রেতারা এসে ভুট্টা কিনে নিচ্ছেন, তাই দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে আমরা সরকারি প্রণোদনায় কৃষকদের ভুট্টা বীজ ও সার দিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা ভুট্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়া ভুট্টার দাম ভালো পাওয়ায় চাষে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
তিনি আরও জানান, এবছর মিরপুর উপজেলায় গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ ভাগ জমিতে তামাকের আবাদ কমেছে। আগামীতে তামাকের পরিবর্তে কৃষকরা ভুট্টাসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য এবং উচ্চমুল্যের ফসল চাষে আগ্রহী হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, দিনদিন কুষ্টিয়ায় ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। এবছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ভুট্টার আবাদ হচ্ছে।
দাম ভালো এবং প্রণোদনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভুট্টার এমন আবাদ বাড়ছে বলে জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
এমএমজেড