ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

রাজবাড়ীতে ব্লাক রাইস চাষে সফল রেজাউল

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
রাজবাড়ীতে ব্লাক রাইস চাষে সফল রেজাউল

রাজবাড়ী: ইউটিউবে দেখে রাজবাড়ীতে প্রথম ব্লাক রাইস বা কালো ধান চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল সেখ। রোপণের ৮০ দিনের মধ্যে তার ক্ষেতে বাতাসে দোল খাচ্ছে কালো ধান।

তার এ সফলতা দেখতে ছুটে যাচ্ছেন স্থানীয় অন্যান্য কৃষকেরা। তারাও কালো ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বাজারে এ কালো ধানের চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ও কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে কালো ধান চাষের পরিকল্পনা করছেন কৃষক রেজাউল সেখ।

রাজবাড়ী জেলা সদরের দাদশী ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কামালপুর গ্রাম। এ গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো ১৫ শতাংশ জমিতে ব্লাক রাইস প্রজাতির ধান চাষ করেছেন তিনি। দেশি জাতের ধানের মতো একই প্রক্রিয়ায় এ কালো ধান চাষ করা হয়।

গত ৩০ বছর ধরে ধান, পাট, গমসহ নানা রকমের সবজির চাষ করেন রেজাউল সেখ। চলতি মৌসুমে ইউটিউব দেখে আগ্রহী হয়ে ব্লাক রাইস জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করে নিজ জমিতে রোপণ করেন তিনি। এতে বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছেন তিনি।

বেশি দামের এ কালো ধানের চাষ এবং উপকারিতার কথা শুনে অনেক কৃষক এখন রেজাউল সেখের ক্ষেত দেখতে আসছেন। অন্যান্য ধানের তুলনায় কয়েকগুণ দাম বেশি হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এ জাতের ধান চাষে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি কালো ধানের বীজ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্লাভিনয়ের্ড বা এনথোসায়ানিন খুব বেশি পরিমাণে থাকায় এ চালের রঙ কালো হয়। এ উপাদানটির কারণে ক্যানসার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে প্রতিহত করতে সহায়তা করে। কালো চাল ক্যানসার প্রতিরোধে অনন্য। এ চালে আয়রন বেশি, কিন্তু শর্করা কম। আর এ চালের ভাত অনেক বেশি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর। কালো ধানে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কৃষক রেজাউল সেখ বাংলানিউজকে বলেন, ধানের বীজ ৫০০ টাকা কেজি কিনেছি। চাউল ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারলে আমি লাভ করতে পারবো। আগামীতে আমি আরও বেশি কালো ধান চাষ করবো। ইউটিউবে দেখে আগ্রহী হয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি এ ধান চাষ শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ সহনশীল বলে প্রমাণিত এ ব্লাক রাইসের চাল একটু মোটা। কৃষি অফিস সব সময় পর্যবেক্ষণ ও সহায়তা করেছে। তারা আমার এ ধানকে বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।  

স্থানীয় কৃষক আফজাল সেখ বাংলানিউজকে বলেন, এখন থেকেই এ কালো ধানের যে চাহিদা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে আশা করা যাচ্ছে এ কালো ধানের চাউল ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হবে। আমি নিজেও আগ্রহী হয়েছি এ ব্লাক রাইস চাষাবাদে।

ব্ল্যাক রাইস ক্ষেত দেখছেন কৃষক রেজাউল

আরেক কৃষক মমিন মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, কৃষক রেজাউল সেখ তার নিজের জমিতে প্রতি বছর বিভিন্ন ফসলের চাষ করেন। এবার তিনি কালো ধান চাষ করেছেন। আমরা দেখতে পেয়েছি ভালো ফলন হয়েছে। আমরা তার সঙ্গে আলোচনা করে কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাক রাইসের চাষাবাদ শুরু করবো।

স্থানীয়রা বলেন, কৃষক রেজাউল সেখ একজন কৃষি উদ্যোক্তা। রাজবাড়ীতে তিনি প্রথম ব্লাক রাইস ধানের চাষ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলনও ভালো হয়েছে। তার ধান নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। ধানের বাজার মূল্য ভালো হলে অনেক কৃষক এ ধান চাষে আগ্রহী হবেন।  

জেলার সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. বশির আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, নানাবিধ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ কালো ধান ও চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামীতে অধিক চাষাবাদের সম্ভাবনা আছে। চলতি মৌসুমে রাজবাড়ীতে কয়েকজন কৃষক এক একর জমিতে পরীক্ষামূলক ব্লাক রাইসের চাষ করছেন। নতুন এ জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহী কৃষকদের নানাবিধ পরামর্শ দিচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষক রেজাউল সেখ ছাড়াও জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় ব্লাক রাইস ধান চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন আরেক কৃষক টিপু সুলতান। তিনিও কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এ ধানের চাষ শুরু করেন। বালিয়াকান্দি বহরপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া মাঠে প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করে প্রথমবারে তিনি ধানের বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন।

উদ্যোক্তা টিপু সুলতান বলেন, ঢাকার একজন কৃষিবিদ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করি। এরপর কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি ধান চাষ শুরু করি। ধানের পাশাপাশি আমার একটি নার্সারি রয়েছে। কৃষি কাজে আমি রাজবাড়ী জেলার একজন সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সাধারণ ধানের চেয়ে কালো ধানের দাম ও চাহিদা অনেক বেশি। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে প্রথমবারের মতো কালো ধানের চাষে সাফল্য পেয়েছেন টিপু সুলতান। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা এ জাতের ধান চাষে চাষিদের নানাবিধ পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।