মানিকগঞ্জ: শখ করে এবার সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। ফলনও আশানূরুপ হয়েছে।
মাঠ ভরা সূর্যমুখী ফুলগুলো ইতোমধ্যে সূর্যের দিকে উঁকি দিয়েছে। যে দৃশ্য মন ভরিয়ে দেবে যে কারও।
উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশী সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। সূর্যমুখী ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি, সেলফি তুলছেন তারা।
সূর্যমুখী ফুল সবুজের মাঝে দেখলে মনে হয় যেন হাজারো সূর্য এক সঙ্গে খেলা করছে। মাথার ওপর যখন সূর্যের আলো ঝলমল করে ঠিক তখন-ই হলুদ রঙের এক নীরব ইশারায় অপরূপ দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে তোলে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৪০ হেক্টর জমিতে এই সূর্যমুখীর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ৩৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যা কিনা জেলার সূর্যমুখীর আবাদ অনুসারে ৯০ শতাংশ ।
সরেজমিনে দেখা যায় , জেলার অনাবাদি পতিত জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। স্বল্প ব্যয়ে অধিক ফলনে লাভবান হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজের মাঝে হলুদ ফুল উঁকি দিচ্ছে।
চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে বীজ (সূর্যমুখী) বিক্রি করা যাবে প্রায় ১৫ হাজার টাকার। অন্য দিকে তেল উৎপাদন করলে বিঘা প্রতি ১০ লিটার তেল পাওয়া যাবে।
সূর্যমুখী তেল মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী যা কিনা হার্টের জন্য ভালো। কম খরচ হওয়ায় এবং অল্প সময়ে ভালো ফলন হওয়াতে দিন দিন এর চাষ বাড়ছে।
সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী এলাকার চাষি আফসার মিয়া বলেন, আমার বাড়ির উঠানে ফেলে রাতা জমিতে এ বছর সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। যে টাকা আমার খরচ হয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি লাভ হবে আশা করি। তবে আমি এই বীজ বিক্রি না করে নিজ বাড়িতে তেল উৎপাদন করে ব্যবহার করব।
সদর উপজেলার দিঘি ইউনিয়নের ভাটবাউর এলাকায় চাষি আব্দুল হালিম বলেন, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে আমার ১৫ শতাংশ জমি আছে। মহাসড়কের পাশে হওয়ায় তেমন কোনো ফসল আবাদ করতে পারি না। কৃষি বিভাগের সহোযোগিতায় এই বছর সূর্যমুখীর আবাদ করেছি,ফলনও ভালো হয়েছে। যে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে আমার, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাভ হবে এই জমি থেকে। আমার দেখাদেখি অনেকেই এই তেল জাতীয় ফসল আবাদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বীজ বিক্রি না করেও নিজেদের জন্য তেল উৎপাদন করে খেলেও বছরে বেশ টাকা সাশ্রয় করা যাবে।
সূর্যমুখীর ক্ষেতে এসে ছবি তুলতে দেখা গেল কলেজশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে অনার্স পড়ুয়া ছাত্রী নুসরাত মহুয়া বলেন, কলেজে যাওয়ার পথে এই সূর্যমুখী ফুল দেখি প্রতিনিয়তই। মন মাতানো এক দৃশ্য। আজ কলেজ শেষ করে এখানে বন্ধুদের নিয়ে আসছি ছবি তুলতে। এত সুন্দর একটি মনোরম দৃশ্য, সে জন্য নিজেকে এই সবুজের মাঝে হলুদ ফুলের মাঝে সেলফিতে আটকাতেই এখানে আসা।
রাজধানীর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আওয়াল মৃধা বলেন,আমাদের এই যান্ত্রিক শহরে এখন আর আগের মতো সূর্যমুখী ফুল দেখাই যায় না। যখন বন্ধুরা বললো ওই বাগানে (সূর্যমুখী ফুল) দেখতে যাব তখন আর লোভ সামলাতে পারলাম না। এখানে এসে অনেক ভালো একটি সময় পার করতে পারলাম বহু বছর পর। যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আমাদের গ্রামে এই সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হতো,কালে পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই সূর্যমুখী ফুলের আবাদ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পুনরায় হারিয়ে যাওয়া সূর্যমুখী ফুলের আবাদ শুরু করেছে সে জন্য কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, সূর্যমুখী তেল জাতীয় ফসল, এই ফসল আবাদের জন্য আমাদের বিভাগ থেকে কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা একান্তভাবে করা হচ্ছে। সূর্যমুখীর আবাদ জেলাতে দিন দিন বাড়ছে, এই ফসলের বীজের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে দেশব্যাপী।
চাষিরা এই সূর্যমুখীর আবাদ করে নিজেদের পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মেটাতে পারবে বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১১.৫০ ঘণ্টা,মার্চ ১৩, ২০২৩
এসএএইচ