ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সুজানগরে কৃষকের ঘরে লক্ষাধিক টন পেঁয়াজের মজুদ

মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
সুজানগরে কৃষকের ঘরে লক্ষাধিক টন পেঁয়াজের মজুদ

পাবনা: পেঁয়াজের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনায় এখনও ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের পাইকারি বাজার। চলতি মাসের প্রথম থেকে জেলার প্রতিটি হাট-বাজারে ধাপে ধাপে বেড়েছে দাম।

তবে এ জেলায় বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ আছে কৃষকের ঘরে।  

বর্তমানে প্রতিমণ দেশি হালি পেঁয়াজ ২৪শ’ থেকে ২৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে পাইকারিভাবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। আকার ও মান ভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা।

সুজানগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফিউল ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলায় কৃষকের ঘরে এখনও ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। পুরো পাবনা জেলার হিসাব করলে অংকটা অনেক বড় হবে।

প্রান্তিক কৃষকদের দাবি, বিগত কয়েক বছর পেঁয়াজ চাষে লাভের মুখ দেখেননি তারা। বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টি ও খড়ার কারণে এ বছরও পেঁয়াজের ফলন কম হয়েছে। ফলন ওঠার শুরুর দিকে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। তবে বর্তমানে সংরক্ষিত পেঁয়াজের সঠিক মূল্য তারা পাচ্ছেন।

তাদের দাবি, পেঁয়াজ আবাদ করার জন্য যা লাগে তার সব কিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৬ থেকে ১৮শ টাকা। সে কারণে পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর কমে গেলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

বিগত বছরে পেঁয়াজ চাষ করে প্রান্তিক কৃষকরা বেশ লোকসানে পড়েন। এবার তারা সেই লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারছেন।  

পাবনা সুজানগর বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক আব্দুল রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, কিন্তু কৃষকরা যখন লোকসান দেন, তখন আর কেউ কথা বলেন না।  ডিজেল থেকে শুরু করে সার, বীজ, কীটনাশক সব জিনিসের দাম বেড়েছে।  সরকার পেঁয়াজ আমদানির কথা বলছে। কিন্তু এখনই আমদানি করতে হবে বলে মনে করি না। কারণ এখনো আমাদের ঘরে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ আছে। এখন আমরা সঠিক দাম পাচ্ছি। তাই সরকার যেন এখনই পেঁয়াজ আমদানি না করে এটাই আমরা চাই।

সুজানগরের পেঁয়াজ চাষি মো. আবুল কালাম বলেন, ৩০ বিঘা জমিতে এ বছরে ফলন হয়েছে গড়ে ২৫ মণ। গত বছরে ৪শ টাকা থেকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে ১৭শ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছিলাম। লাভ তো দূরের কথা ক্ষতি হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। এই ক্ষতিপূরণের টাকা তো আমরা পাইনি। এবার একটু দাম বেড়েছে।  পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা সরকারের উদ্যোগ চাই।  

জেলার অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী সুজানগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফিউল ইসলাম বলেন, গত বছরে এই একটি উপজেলাতেই ১৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল। এ বছরে আরও ১০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। মোট উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। এখনো কৃষকের ঘরে মজুদ আছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন। এটা এক উপজেলার হিসাব। পুরো পাবনার হিসাব করলে দেখা যাবে ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ কৃষক পর্যায়ে রয়েছে। তাই এখনই পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন হবে না।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দীনের দেওয়া তথ্যমতে, জেলাতে এ বছরে ৫২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৮ মেট্রিক টন। গড়ে প্রতি হেক্টরে ১৪.৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকরা লাভ করতে পারেননি। এখন তারা লাভের মুখ দেখছেন।  এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ কৃষক পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।