ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘ম্যাঙ্গো ট্রেনের’ পর চালু করা হবে ‘ক্যাটল ট্রেন’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
‘ম্যাঙ্গো ট্রেনের’ পর চালু করা হবে ‘ক্যাটল ট্রেন’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের পর কম খরচে কম সময়ে ঢাকায় গরু পরিবহনের জন্য চালু করা হবে ক্যাটল ট্রেন। ট্রাকে করে গরু নিয়ে গেলে যে খরচ হয়, তার চার ভাগের এক ভাগ খরচ হবে ক্যাটল ট্রেনে।

বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন চত্বরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।  

রেলমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগসহ রেলের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। আর বিএনপি-জামায়াত রেলের প্রতি কোনো দৃষ্টি না দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লুটপাটে ব্যস্ত থেকেছে। তারা রেলকে অঘোষিতভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে, অন্যদিকে শেখ হাসিনা রেলকে পুনরুদ্ধার করেছে।  

শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু সেতুতে আপনাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে পৃথকভাবে রেলসেতু তৈরি করছে। সেখানে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন যাবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করেও স্বপ্নের পদ্মা সেতু রুখতে পারেনি। জনগণের শক্তির ওপর ভর করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জনগণের টাকায় সেতু করব। যা বাস্তবায়ন করেছেন। পদ্মা সেতুতেও রেল সেতু হচ্ছে।

এসময় তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সব রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর থেকে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো চালু করেছে। দেশের সব পরিবহনে ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু ট্রেনের ভাড়া বাড়েনি। আগে যা ছিল, এখনও তাই আছে। প্রধানমন্ত্রীকে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি অবহিত করা হলে তাতে তিনি রাজি হননি। জনগণের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ভাড়া অপরিবতির্ত রেখেছেন।

নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আপনারা চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী এ ট্রেনের জন্য আন্দোলন বা দাবি না জানালেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছে।  

স্থানীয় সাংসদদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেলমন্ত্রী বলেন, জনবান্ধব সরকারকে কোনো তাগাদা দেওয়া লাগবে না। নিজ তাগিদেই সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে। ঈদের পরে জুলাই মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে বন্ধ থাকা ট্রেন চালু হবে। এমনকি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বন্ধ হওয়া শাটল ট্রেন সেপ্টেম্বর মাসে চালু হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থবিরতা কেটে গেলেই সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে। যা ইতোমধ্যেই একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে এসে কিছু কাজ শুরু করেছে।  

জামায়াতের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ২ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে দেশের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করেছে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাধাগ্রস্ত করতে ঘাতক বিএনপি জামায়াত বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশের উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় এসে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত এবং উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর রাজশাহীতে রেলের কোনো কাজ হয়নি। উল্টো জামায়াতে ইসলাম নব্য বিএনপি হয়ে দেশ বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন চত্বরে আয়োজিত উদ্বোধনী সভায় জেলা প্রশাসন এ কে এম গালিব খানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ।  

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, আমচাষি ও ব্যবসায়ীসহ অন্যান্যরা।

পরে পতাকা উড়িয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকাগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

প্রসঙ্গত: প্রথম ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি চালু হয় ২০২০ সালের ৫ জুন। চলতি বছর ৪র্থ বারের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনটির উদ্বোধন করা হলেও এ বছর প্রথমবার রেলমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) দুপুরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন করেন। তবে রহনপুর থেকে বিকেল ৪টায় ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। তবে নাচোল, নিজামপুরে, আমনুরা হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং রাত সোয়া ১টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। মোট ১৪টি স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে ব্যবসায়ী ও চাষিদের খরচ হবে প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৩২ পয়সা।

বিলম্বে ট্রেন চালু হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশা আমের মৌসুমের অনেক পরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি চালু হওয়ায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। শিবগঞ্জ উপজেলার গবিনপুর গ্রামের আমচাষি মঞ্জিল জানান, তিনি দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আজ ৯ মণ খিরসাপাত আম কম খরচে ঢাকায় পাঠাতে পারছেন। এ জন্য বেশ খুশি। ট্রেনে মাত্র ১ টাকা ৩০ পয়সায় এক কেজি আম পাঠানো সম্ভব হলেও কুরিয়ারগুলোতে ১৪-১৬ টাকা করে চার্জ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। ট্রেনটি আরও আগে চালু করা হলে তাকে কুরিয়ারে পাঠানো ১৮ মণ আম ট্রেনের মাধ্যমেই পাঠাতে পারত। এতে সরকারও যেমন রাজস্ব পেত, তেমনি চাষিরাও উপকৃত হতো।

সদর উপজেলার আমচাষি নজরুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাড়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি প্রশাসন বেঁধে না দিলেও মে মাসের শেষ দিকে বিভিন্ন জাতের গুটি আম এবং জুন মাসের প্রথম দিন থেকেই খিরসাপাত আম বাজারে ব্যাপকহারে নামতে আরম্ভ করেছে। ইতোমধ্যেই জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা আম কেনা শুরু এবং জেলার বাইরে পাঠানো আরম্ভ করেছেন। তাই ট্রেনটি অন্তত ১লা জুন থেকে চালু করলেও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতেন। তাছাড়া আমের মৌসুমের শুরুতেই শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমের জন্য তাগাদা দেওয়ায় এবং মৌসুমের শেষের দিকে আমের দাম বেড়ে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন কুরিয়ারে আমগুলো পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ট্রেনটি আগে চালু হলে কম খরচে তার মতো অনেকেই আম পাঠাতে পারত। দেরিতে ট্রেন চালুর ফলে সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি রাজস্ব ঠিকমতো পেলে সরকার যেমন লাভবান হবে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে। কিন্তু প্রতিবছরই ট্রেনটি সময় মত চালু না হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে। গত বছর চালুর সাতদিনের মাথায় লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনটি। এ বছরও ট্রেনটি দেরিতে চালু হওয়ায় জেলার শতকরা ২০ ভাগ আম ইতোমধ্যেই পরিবহন সম্পন্ন হয়ে গেছে। তাই রেল কর্তৃপক্ষ মৌসুম শুরুর আগেই ট্রেনটি চালু করলে একদিনে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং ট্রেনটি চালু রাখতে সরকারের সদিচ্ছা থাকবে, অন্যদিকে জেলার ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

আম চাষি গোলাম মোস্তফা সুমন জানান, মাত্র ৭-১০ দিনের জন্য নয়, পুরো মৌসুম ধরে আমের ট্রেনটি চালু রাখা উচিত। আর সম্ভব হলে সারা বছরই একটি কৃষিপণ্য বহনের জন্য একটি বগি রাখা হলে এ এলাকার চাষি ও কৃষকরা উপকৃত হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ট্রেন চালু করতে দেরির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ইঞ্জিন, বগিসহ বিভিন্ন বিষয় ম্যানেজ করার পর একটি ট্রেন চালু করা সম্ভব হয়। তাই ট্রেনটি চালু করতে একটু দেরি হয়।  

তিনি আরও জানান, মূলত ল্যাংড়া আমকে টার্গেট করে ট্রেনটি চালু করা হয়েছে। ল্যাংড়া আম ৬ জুনের দিকে বাজারে আসা আরম্ভ করায় সে সময় ধরে ট্রেনটি চালু করা হয়েছে। জি আই সনদপ্রাপ্ত খিরসাপাত ও বিভিন্ন গুটি আমের তুলনায় ল্যাংড়া আমের উৎপাদন মাত্র ১৫ শতাংশ তারপরও কেন ল্যাংড়াকে টার্গেট করা হলো এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি দাবি করেন, প্রতি বছর লোকসান হলেও সেবার জন্য ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়েছে। তাই এ ট্রেনটি ১-২ সপ্তাহ চালানোর পর ঈদের আগে এ ট্রেন বন্ধ করে ক্যাটেল ট্রেন চালু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।