ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ঘাস ছাড়া দিনে ৬০০ টাকার খাবার খায় ষাঁড়টি

মো: জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
ঘাস ছাড়া দিনে ৬০০ টাকার খাবার খায় ষাঁড়টি শারমিন আক্তার ইতি ও তার ষাঁড় রাজাবাবু

কুষ্টিয়া:  ২০২১ সালে ৭৫ হাজার টাকায় ফ্রিজিয়ান শাহীওয়াল ক্রস জাতের একটি ষাঁড় কেনেন কুষ্টিয়ার এক প্রবাসী শাহাবুলের স্ত্রী শারমিন আক্তার ইতি।  

সযতনে লালনপালন করা তার ষাঁড়টি বর্তমানে উচ্চতায় ৫ ফুট,  লম্বা ৭ ফুট, এর ওজন প্রায় ২২মণ।

এবারের কুরবানি ঈদে ষাঁড়টি বিক্রি করতে আগ্রহী তিনি। দাম চাচ্ছেন ৮ লাখ টাকা।

৭৫ হাজার টাকায় কেনা ষাঁড়টি দুই বছরেই ৮ লাখ! সে প্রশ্নে জানা গেছে, ষাঁড়টি লালনপালনে দু হাতে টাকা খরচ করেছেন ইতি। প্রতিদিন একে ঘাস বাদেই ৬শ টাকার দানাদার খাবার খাইয়েছেন। ষাঁড়টির দৈনিক খাদ্য তালিকায় রয়েছে কাঁচা ঘাস, গম, ছোলা, ভুট্টার ভুসি। প্রতিদিন দুই বেলা, বেশি গরম পড়লে তিনবেলা গোসল করানো হয় একে।

শখ করে ষাঁড়টির ‘রাজাবাবু’ রেখেছেন এর মালিক শারমিন আক্তার ইতি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর এলাকার নিজ বাড়িতেই ষাঁড়টিকে লালনপালন করেছেন ইতি ও তার পরিবারের সদস্যরা।  

আর ‘রাজাবাবু’কে দেখতে ওই বাড়িতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন মানুষেরা।  

শারমিন আক্তার ইতি বলেন, আমি সন্তানের মতো করে আমার এই ষাঁড়কে লালনপালন করি। সকালে শুধু কাঁচা ঘাস খায়। দুপুরে ভুট্টার গুঁড়া, আটা, ধানের গুঁড়া, খৈল, গমের গুঁড়া, ছোলার গুঁড়া, গুড় ও পানি খেতে দিই। বিকেলে ও রাতে ঘাস, শোয়ার আগে পানি খেতে দিই। প্রতিদিন ঘাস ছাড়াও ৬শ টাকার দানাদার খাবার খায়  ‘রাজাবাবু’। এর দাম চাচ্ছি ৮ লাখ টাকা। অনেকেই আসছেন কিনতে কিন্তু আশানুরূপ দাম না বলায় এখনো বিক্রি করিনি।

এদিকে মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের হাজরাহাটি গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি জামাত মল্লিক দুটি ষাঁড় লালন পালন করেছেন এবারের ঈদে বিক্রির জন্য। একটির নাম রেখেছেন তিনি সোহাগ, অন্যটির নাম বুলবুল। ষাঁড় দুটির ওজন প্রায় ৩০ মন এবং ২৬ মন। ষাঁড় দুটি দিনে গড়ে ১৩শ টাকার খাবার খায়। সাদা-কালো রং এর সোহাগ নামের ষাঁড়টি ওজন ৩০ মণ। বুলবুলের ওজন প্রায় ২৬।

খামারি জামাত মল্লিক জানান, দুই বছর আগে দুইটি ক্রস জাতের বাছুর কিনেছিলাম ১ লাখ টাকা দিয়ে। প্রতিনিয়ত আমি ষাঁড় দুটোর যত্ন করি। তাদের গোয়ালঘর পাকা এবং ফ্যানের ব্যবস্থা করেছি। দিনে দুই বেলা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করাই। নিয়ম করে সকালে, দুপুরে, রাতে খাবার দেই। কাঁচা নেপিয়ারসহ বিভিন্ন ঘাস, খৈল, চালের কুড়া, গমের ভুসি, ভুট্টা ভাঙা, ধান ভাঙা, চিটা গুড়, ফলমুলসহ বিভিন্ন দানাদার খাবার খায় এরা।  

তিনি বলেন, দুটি ষাঁড় একসাথে বিক্রি করব ভাবছি। তাই জোড়া ধরে দাম চাচ্ছি ২০ লাখ টাকা। একসাথে কিনেছি একসাথেই বিক্রি করবো।  

কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় ১৭ হাজার ৫শ ৯০টি খামারে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭শ ৭৮টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে গরু রয়েছে ৯৭ হাজার ৮শ ০১টি, ছাগল ও ভেড়া ৭৮ হাজার ৬শ ৭৬টি এবং মহিষ ১ হাজার ৩শ ০১টি। গতবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিলো গরু ৯৩ হাজার ৯শ ৪৯টি, ছাগল ৬৩ হাজার ৪শ ৪৯টি, ভেড়া ১ হাজার ৭শ ২১টি ও মহিষ ১ হাজার ৪শ ৫২টিসহ মোট ১ লাখ ৬০ হাজার ৫শ ৭১টি গবাদিপশু। যা গতবারের চেয়ে এবার বেশি ১৭ হাজার ২শ ৭টি গবাদিপশু। প্রস্তুতকৃত ১৬টি পশুহাটে এসব গবাদিপশু কোরবানির জন্য বিক্রি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার হাটগুলোতে বিক্রি করা হবে।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়ার খামারিরা তাদের প্রস্তুতকৃত কুরবানির পশু জেলার স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন পশুহাটে বিক্রি করেন। আমরা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারিদের প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ এবং পশুপালনে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করি। আশা করি এবছর খামারিরা ভালো দাম পাবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৪২৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।