ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মান ভালো, তাই চাহিদা বাড়ছে বান্দরবানের কাজুবাদামের

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
মান ভালো, তাই চাহিদা বাড়ছে বান্দরবানের কাজুবাদামের

বান্দরবান: বান্দরবানে উৎপাদিত কাজুবাদাম দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পুষ্টিকর ও মানসম্মত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত স্থানে এ বাদাম প্যাকেট করা হয়।

ফলে সারা দেশে এখানকার কাজুর চাহিদা বাড়ছে।

এক সময় পার্বত্য জেলা বান্দরবানে কাজুবাদামের তেমন কোনো কদর না থাকলেও এখন পাহাড়ে অনেক জমিতে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে চারা ও সার বিতরণের পাশাপাশি চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় অনায়াসে চাষ করা যাচ্ছে কাজুবাদাম। আর উৎপাদিত বাদাম কৃষকরা নিজ বাগান থেকেই বিক্রি করে লাভ করছেন প্রচুর মুনাফা।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বান্দরবানের সাতটি উপজেলার (সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি) বিভিন্ন স্থানে প্রচুর কাজুবাদামের চাষ হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কাজুর চাষ বাড়াতে কৃষকদের দেওয়া হয় বিনামূল্যে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ।

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বান্দরবানে কাজুবাদাম চাষ করতেন ৪১৩২ জন। চারার সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩টি আর উৎপাদন হয়েছিল ১৩০৮ মেট্রিক টন বাদাম।

আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ সাত উপজেলায় কাজুবাদামের চাষির সংখ্যা ৪৩১৬। চারার সংখ্যার ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৬টি আর উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০৬ মেট্রিক টন।

এদিকে বান্দরবানের বিভিন্ন বাগান থেকে কাজুবাদাম সংগ্রহ করে বান্দরবানেই প্রক্রিয়াজাত হয়ে সারা দেশের মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় চাষিদের যেমন বাজার নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারা কম দামে দেশি কাজুবাদাম হাতের নাগালে পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে আমদানি নির্ভরতা কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে অনেকটাই।

কাজুবাদাম দ্রুত এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্যাকেটজাত করতে বান্দরবান জেলা শহরের পশ্চিম বালাঘাটা এলাকায় একটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তুলেছেন দুই তরুণ উদ্যোক্তা। কিষাণঘর অ্যাগ্রো নামে এ কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেটজাতকরণে এ কারখানাটি চালু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে। শুরুতে হাতে গোনা দুই-চার শ্রমিক কাজ করলেও এখন কারখানার আকার বেড়েছে আর শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ জনে।  

কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ শ্রমিক কাজ করছেন। কাঁচা কাজুবাদাম বাছাই, সেদ্ধ, ভেঙে খোসা ছাড়ানোসহ সব প্রক্রিয়ায় যারা অংশ নেন, তাদের অধিকাংশই নারী। তারা কেউ দৈনিক পারিশ্রমিকে ও কেউ মাসিক বেতনে কাজ করছেন।

কিষাণঘর অ্যাগ্রোর ব্যবস্থ্যাপনা পরিচালক মো. তারেক বাংলানিউজকে জানান, বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলার বাগান থেকে কাজুবাদাম সংগ্রহ করে কারখানায় আনার পর প্রক্রিয়াজাত করতে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে রোদে শুকাতে হয়, তারপর ছোট ও বড় দানা আলাদা করে ব্রয়লারে সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করা গরম বাদাম ঠান্ডা করে খোসা ছাড়ানো, কাটা, বাছাই, রোস্টিং শেষে প্যাকেজিংয়ের পর বাজারজাত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

তিনি বাংলানিউজকে আরও জানান, আমাদের এ ছোট কারখানায় বেশিরভাগ শ্রমিক নারী। তাদের সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকেলর নাস্তা দেওয়ার পাশাপাশি কাজ অনুপাতে বিভিন্ন পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। বাজারে কিষাণঘরের নন রোস্ট এক কেজি প্যাকেট কাজুবাদাম ১৩০০ টাকা ও রোস্টেড কাজুবাদাম ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

পরিচালক মো. তারেক বাংলানিউজকে আরও জানান, দিন দিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের কাজুবাদামের চাহিদা বাড়ছে তবে আমরা বছরে যে পরিমাণ কাজুবাদাম প্রয়োজন, সে পরিমাণ কাঁচামাল ও পুজিঁর অভাবে কিনতে না পারায় চাহিদা মেটাতে পারছি না। শুরুতে আমাদের কিষাণঘর অ্যাগ্রোর উৎপাদন ছিল বার্ষিক পাঁচ-ছয় টন আর এখন ২০২৩ সালে এসে প্রায় ৭০০ টন উৎপাদন হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবানের উপ-পরিচালক এম শাহ নেয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি কাজুবাদাম উৎপাদন হয়। কৃষি বিভাগ বান্দরবানের কাজুবাদ চাষ বাড়াতে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বান্দরবানের কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করে বান্দরবানসহ সারা দেশের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য জেলা সদরের কিষাণঘর অ্যাগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এ কারখানা স্থাপিত হওয়ায় বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।