মৌলভীবাজার: গাছের ডালে বিন্দু-বিন্দু গোল-গোল ফল। অনেকগুলো একত্রে জটলা পাকিয়ে আছে।
সম্প্রতি অরবরই গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে চোখ সেই ফলের আপন সৌন্দর্যটুকু খুঁজে পায়। গাছের নিচে গিয়ে দু’চোখ ভরে ডাল-ফলের মাখামাখি হয়ে থাকার অপূর্ব শোভাতে সহজেই চোখ চলে যায়।
ডালের ওপর ছায়া দিয়ে থাকা পাতাগুলোর একত্রিত স্তর তখন শেষ চৈত্র্যের বাতাসে মৃদু কাঁপছিল। তবে ফলটির অগ্রভাগের ডাটা এতোটা শক্ত যে, সেই বাতাস ফলগুলোকে কাঁপিয়ে তুলতে পারেনি।
প্রাত্যহিক জীবনে অনেকেই এই ফলটি মাঝে মাঝে খেতে ভালোবাসেন। রন্ধনপ্রণালীতে ওর ব্যবহার রয়েছে। টক স্বাদের পাকা অরবরই ঝাল-লবণ দিয়ে মাখিয়ে খেতে ভীষণ মজা লাগে। এছাড়া এটা দিয়ে আচার, জুস, জেলি, চাটনি ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। অনেকে এটা দিয়ে চমৎকার টক রান্না করেন বা ভর্তা তৈরি করেন।
এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) মো. সামছুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এ ফলটিকে ‘লেউর’ বলে। তবে এর উদ্ভিদজাত বাংলা নাম ‘অরবরই’। এছাড়াও হরিফল, নালতা লেবইর, ফরফরি, নইল, রয়েল প্রভৃতি নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus acidus এবং এটি Phyllanthaceae পরিবারের উদ্ভিদ।
তিনি আরও বলেন, এ ফলটির ব্যাস শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে বা হয়ে থাকে। দেখতে হালকা হলুদ রঙের। এই ফলের ত্বক খাঁজ কাটা থাকে। মূলত অরবরই চাষ করা হয় না। তবে বিশ্বের অনেক দেশেই এটিকে শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে লাগানো হয়। গাছের উচ্চতা খুব বেশি হয় না, মাত্র ৪-৫ মিটার উঁচু হয়। গাছটি দেখতে অনেকটা কামরাঙ্গা গাছের মতো। আর ফলগুলো দেখতে অনেকটা ছোট তারার মতোই লাগে। পাকা ফল হলুদ ও হলুদাভ সবুজ হয়। ফলের ভেতরে গাঢ় সবুজ রঙের আঁটি থাকে। এই আঁটির ভেতর ৬-৮টি মসৃণ। ছোট্ট বীজ থাকে।
অকাল বার্ধক্য রোধে এবং ত্বকের রোগপ্রতিরোধে এই ফলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও এর রস চুলের গোড়ায় লাগালে চুল মজবুত হয় ও খুশকি দূর হয়। মৌসুমি জ্বর দূরীকরণে এবং জ্বর পরবর্তী মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে অরবরই ফলটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে জানান এই কৃষিবিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
বিবিবি/এএটি