ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সবজির চারা তৈরিতে ব্যস্ত বগুড়ার চাষিরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৪
সবজির চারা তৈরিতে ব্যস্ত বগুড়ার চাষিরা সবজি ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত চাষি।

বগুড়া: রবি মৌসুমের শীতকালীন আগাম সবজির চারা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার চাষিরা। অনেক চাষি গড়ে তুলেছেন নার্সারি।

সেখান থেকে বিক্রি করা হয় সবজির চারা। এখন সবজির বীজতলা তৈরি, চারা বিক্রি ও পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেক চাষি।  

অন্যদিকে জমি ফাঁকা হতেই নতুন সবজি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বগুড়ার সদর উপজেলার মহাস্থান, শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর, কামারপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে নতুন নতুন সবজির বীজতলা নিয়ে চাষিদের কর্মব্যস্ততা দেখা যায়।

শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনে খ্যাতি রয়েছে বগুড়ার। মূলত ১৯৮৫ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে সবজির চারা উৎপাদন শুরু হয় এ অঞ্চলে। শুধু শাজাহানপুর উপজেলাতেই শতাধিক উদ্যোক্তা এ পেশায় জড়িত। তারা সবজির চারা উৎপাদন করে সফল হয়েছেন। সবজি চারা সরবরাহ করছেন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। এখানকার সবজির চারা সরবরাহ হয়ে থাকে নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহী, গাইবান্ধা, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।

বগুড়া সদর উপজেলার মহাস্থান, শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া, মোস্তইল, শাহানগরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বীজতলা প্রস্তুতের পর জমির মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল তৈরি করে বীজ রোপণ করা হয়েছে। এরপর বাঁশের তৈরি ‘বেতি’গুলো রিংয়ের মতো বসিয়ে ওপরে পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  

চাষিরা জানান, প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে বাড়ি থেকে বীজতলায় যান। কাস্তে, কোদালসহ অন্যান্য কৃষি সরঞ্জাম নিয়ে নামেন জমিতে। কেউ কেউ জমিতে রোপণ করেন বীজ।  

সদর উপজেলার মহাস্থান এলাকার নার্সারি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চারার জন্য গরম পরিবেশ সৃষ্টি করতেই পলিথিনে মুড়িয়ে রাখতে হয়। মাঝে মাঝে পলিথিনগুলো সামান্য উঠিয়ে এক পাশ ফাঁকা করে দেওয়া হয় আলো বাতাস ঢোকার জন্য। বীজ বপন থেকে শুরু করে প্রথম এক সপ্তাহের মতো এ কার্যক্রম চলে। বীজ গজিয়ে ওঠার পর পলিথিনগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর বিক্রির আগ পর্যন্ত নিয়মিত চলে পরিচর্যা। পুরুষদের পাশাপাশি এ কাজে নারীরাও যোগ দেন।

শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর এলাকার সাদিক নার্সারির মালিক মো. আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, বছরের ছয় মাস নার্সারিতে ব্যবসা চলে। শাজাহানপুর উপজেলায় কমপক্ষে শতাধিক সবজির নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারিতে নানা জাতের সবজির বীজ উৎপাদন করা হয়। এসব নার্সারিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, গাঁজর, পটোল, শিম, বরবটি, পালং শাক, লাল শাক, ঝিঙ্গা, করোলাসহ বিভিন্ন সবজির চারা পাওয়া যায়।

আনোয়ারা নার্সারির পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, হাইব্রিড জাতের চারার বেশি চাহিদা রয়েছে। হাইব্রিড জাতের মরিচের চারা সব চেয়ে বেশি বিক্রি হয়। চাষিরা প্রয়োজন মতো সবজির চারা নিতে বুকিং দেন। সে হিসেবে প্যাকেট তৈরি করে চারা সরবরাহ করা হয়। এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষের জন্য চারা উৎপাদন করতে পৃথক চারটি শেডে বীজ ছিটানো হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভালোমানের চারা নিতে বগুড়ায় আসেন চাষিরা। প্রতিটি চারা এক থেকে দের টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা উপজেলা থেকে মরিচের চারা কিনতে আসা সৈয়দ কামাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে মরিচের চারা নিতে এসেছেন শাহানগরে। প্রতি বছর এখান থেকে মরিচ, টমেটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা নিয়ে যান। এক হাজারটি মরিচের চারা কিনেছেন এক হাজার ২০০ টাকা দিয়ে। তাদের এলাকার চারার চেয়ে এখানকার চারার মান অনেক ভালো।

নার্সারি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতি এক হাজার পিস ফুলকপির চারা ৯০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, বাঁধাকপির চারা ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, মরিচের চারা ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, টমেটোর চারা দেড় হাজার টাকা, বেগুনের চারা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, পেঁয়াজের চারা পাঁচ কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গেল বছর রবি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষাবাদ হয় ১৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে৷ এ বছরের টার্গেট এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। এ পর্যন্ত দুই হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষাবাদ হয়েছে৷ জমি ফাঁকা হলেই সবজি চাষাবাদ শুরু হবে। তবে গেল বছরের তুলনায় চাষাবাদ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

বগুড়ায় শীতকালীন সবজি চাষিরা মূলত আগস্টের মধ্যবর্তী সময় থেকেই জমিতে আগাম চারা উৎপাদন শুরু করেন। বগুড়ার শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, শেরপুর, সদর, গাবতলী ও কাহালুসজ জেলায় চাষিরা ৩২৪টি নার্সারিতে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজির চারা করা হয়েছে। আর বীজতলার এসব চারা দিয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ গুণ জমিতে চাষ করা সম্ভব বলেও জানান কৃষিবিদ ফরিদুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৪
কেইউএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।