নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় আলু আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ নিয়ে তাদের নাজেহাল অবস্থা।
সৈয়দপুরে হিমাগার রয়েছে তিনটি। এগুলো হচ্ছে, নর্দান কোল্ড স্টোরেজ, সাজেদা কোল্ড স্টোরেজ ও ইসমাঈল বীজ হিমাগার। এসব হিমাগারে সৈয়দপুরসহ আশেপাশের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, খানসামা ও চিরির বন্দর এলাকার কৃষক ও পাইকার এবং ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করে থাকেন। এসব হিমাগার সৈয়দপুর-রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ট্রাক, ভ্যানে কৃষকরা আলু নিয়ে এসে না রাখতে পারায় মহাসড়কে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
হিমাগার কর্তৃপক্ষ আগের আলু রাখার পরে নতুন করে আলু হিমাগারে নেবেন। এজন্য অনেকের আলুর বস্তাও ফেরত পাঠাচ্ছেন। কিন্ত কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তা মানতে নারাজ। ফলে যত্রতত্র আলুর বস্তা ফেলে রাখায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অতি প্রয়োজনীয় যানবাহন এই সড়কে চলাচল করলেও বাকি যানবাহন বিকল্প সড়কে চলাচল করছে।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আলুচাষি আমিমুল রেহসান বলেন, এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় এবার বেশি জমিতে আলু লাগিয়েছি। ১১০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু কিনে আবাদ করার পর সেই আলু এবার মাত্র ১৩-১৪ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে হিমাগারে আলু রাখার জন্য নিয়ে এসেছি। কিন্তু সেখানেও জায়গা মিলছে না কৃষকের আবাদি আলুর।
উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়ন এলাকার কৃষক আহগার আলী, সাহাবাজ আলী বলেন, আমরা এবার আলু চাষ করে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রতি কেজি আলু বাজারে এখন মাত্র ১২-১৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা, খরচ ওঠানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ বছর সংসারে প্রচুর ঘাটতিতে পড়তে হবে। আল্লাহ ভালো জানে, কী আছে নসিবে!
ইসমাঈল বীজ হিমাগার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, মহাসড়কের কামারপুকুর বাজার থেকে চিকলী বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সম্পূর্ণ রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইসমাঈল বীজ হিমাগারের কারণে। মাঝে মধ্যে বাস টার্মিনাল ও চিকলী বাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। হিমাগার কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন আলুচাষি, আলু ব্যবসায়ী, চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ পথচারীরা।
সূত্র জানায়, সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের কামারপুকুর এলাকায় প্রায় পাশাপাশি দুটি হিমাগার রয়েছে। এর মধ্যে হচ্ছে সাজেদা কোল্ড স্টোরেজ ও ইসমাইল বীজ হিমাগার। এ দুটি আলুর হিমাগারে বস্তা ঢোকাতে কৃষক ও পাইকাররা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ফলে রাস্তাজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে আলুর বস্তা।
হিমাগার কর্তৃপক্ষরা জানান, এবারে হিমাগারে সবচেয়ে বেশি চাপ। সব কৃষক ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে হিমাগারে আসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হিমাগারে আশেপাশে রাখা আলু আগে হিমাগারে ঢোকানো হচ্ছে। তারপর বিরতি দিয়ে আগাম দেওয়া স্লিপের আলুর বস্তা নেওয়া হচ্ছে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশি জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। ফলে সংরক্ষণ নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, আলু সংরক্ষণের জন্য কৃষকরা হিমাগার ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। ফলে প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে কাজ করছে পুলিশ ও আনসার ভিডিপি সদস্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৫
এসআরএস