ফেনী: গেল বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যয় নেমে আসে ফেনীসহ আশপাশের অঞ্চলে। সেই বন্যায় জীবন ও জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্যায় সৃষ্ট পলি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তরমুজ চাষাবাদে।
চলতি মৌসুমে বন্যার এই পলির কারণে ফেনী অঞ্চলে তরমুজের আবাদ বেড়েছে। কমেছে সার-কীটনাশকসহ চাষাবাদের খরচ। ভালো দাম পাওয়া নিয়েও আশাবাদী চাষিরা।
ফেনী সদর উপজেলার আমিন বাজারের পাশের ফসলি মাঠ। বন্যায় ডুবে যাওয়ার পর হয়নি ধান। সেই মাঠের ৪০ একর জমিতে বিকল্প হিসেবে চাষ হয়েছে তরমুজের।
কৃষি উদ্যোক্তারা জানান, বন্যা অনেকভাবে ক্ষতি করলেও এর ফলে জমাকৃত পলি হয়ে এসেছে আশীর্বাদ হিসেবে। এই অঞ্চলে তরমুজ চাষে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে আগাম চাষাবাদের তরমুজ।
তরমুজের আবাদকারী জান্নাত এগ্রোর পরিচালক তোফায়েল রনি ও ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, গেলবারের বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের কৃষি প্রকল্প। ঘুরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে তারা তরমুজের আবাদকে বেঁচে নিয়েছে। ৪০ একর জমিতে তরমুজ আবাদে ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ হলেও সব ঠিক থাকলে বিক্রি এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তাদের আশা।
অপরদিকে জেলার উপকূলীয় জনপদ সোনাগাজীর চরাঞ্চলেও বেড়েছে তরমুজের আবাদ।
চরের চাষিরা জানান, বন্যায় সৃষ্ট পলি এ মৌসুমে বেড়েছে তরমুজের উৎপাদন। বন্যার পলি জমায় কমেছে সারের খরচ।
সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার তরমুজ আবাদকারী কৃষি উদ্যোক্তা আবু সাইদ রুবেল জানান, বন্যার পরে ফসলের মাঠে পলি জমেছে। এর ফলে সেই পলিতে তরমুজের আবাদ ভালো হচ্ছে। সারের খরচও কমেছে অনেক।
তিনি বলেন, আগে একর প্রতি সার লাগতো সাড়ে ৪শ কেজি। এখন তা ৩শ কেজি হলে চলছে।
ওই এলাকার চাষি মাসুদ বলেন, গাছের বয়সের আলোকে বৃদ্ধি ভালো। বৃষ্টি ও বড় ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যা না থাকলে চলতি বছর তরমুজের আবাদ ভালো হবে। এছাড়াও জেলার আরেক উপজেলা ছাগলনাইয়ার শুভপুর, ফুলগাজী ও পরশুরাম, দাগনভূঞাঁর কিছু অঞ্চলেও বেড়েছে তরমুজের আবাদ।
কৃষকও সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে চলতি মৌসুমে ফেনীতে তরমুজের উৎপাদন অন্য যেকোনো বছরের রেকর্ডকে অতিক্রম করবে।
কৃষি বিভাগও জানায়, বিগত বছরগুলোর চেয়ে জেলায় বেড়েছে তরমুজের আবাদ। সবচেয়ে বেড়েছে সোনাগাজী উপজেলায়। এখানকার চরের ৬শ হেক্টরের বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে রসালো এই ফল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফেনীর অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, গেল মৌসুমে ফেনীতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল ৬২৬ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ২৯ হাজার ১৩৭ টন তরমুজ। চলতি মৌসুমে তরমুজের আবাদ হয়েছে ৭৬১ হেক্টর। আবাদ বেড়েছে ১৩৫ হেক্টর জমিতে।
গেল মৌসুমে ফেনীতে আবাদ করা তরমুজের বাজার ছিল প্রায় ১শ পাঁচ কোটি টাকার। চলতি মৌসুমে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশাবাদ চাষি ও সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৫
এসএইচডি/এএটি