ঢাকা, সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২, ২৩ জুন ২০২৫, ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

কৃষি

পরিত্যক্ত ধানক্ষেতে ‘সম্ভাবনার ঢেঁড়শ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৫১, জুন ২৩, ২০২৫
পরিত্যক্ত ধানক্ষেতে ‘সম্ভাবনার ঢেঁড়শ’ ঢেঁড়শের ক্ষেতে পরিচর্যা করছেন কৃষক। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: যে ধানক্ষেতে কৃষক সবজি লাগিয়েছেন, এই ক্ষেত আসলে ধানের জমি। বছরের অন্যান্য সময়ে কৃষক এখানে চাষ করেন ধান।

কিন্তু ধান কাটার পর যখন এই ক্ষেত ধানহীন বা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে তখনই কৃষক এই জমিটি ফেলে না রেখে জমির সদ্ব্যবহার ঘটিয়েছেন। এর ফলেই এসেছে সাফল্য। পাতার নিচে নিচে ধরে আছে শত শত ঢেঁড়শ।  

স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে চাষি বিষু রঞ্জন কপালি দু-তিন মাস আগে ঢেঁড়শ লাগিয়েছিলেন। সেই ঢেঁড়শই এখন ‘সম্ভাবনার ঢেঁড়শ’। ফলন সাফল্য হয়ে ফিরে এসেছে তার কাছে।  

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার টিকরিয়া কপালিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই ধারেই ঢেঁড়শের ফলন।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢেঁড়শের এই জাতের নাম ‘দুরন্ত’। এটি নতুন জাত সম্প্রসারণ পর্যায়ের আওতাভুক্ত কৃষিপণ্য।  

চাষি বিষু জানান, দুই কিয়ার (বিঘা) জমিতে অগ্রহায়ণ মাসে ঢেঁড়শ লাগিয়েছিলাম। চারা বের হওয়ার প্রায় ৪৫/৪৬ দিন পর ঢেঁড়শ ধরা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কিয়ারে প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে।  

তিনি বলেন, এই গাছগুলোর বয়স এখন প্রায় দেড়-দুই মাস এবং এর ফলনক্ষমতা থাকবে প্রায় তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত। মাস খানেক ধরে ঢেঁড়শ বাজারে বিক্রি করছি। আরও দুই-আড়াই মাস বিক্রি করতে পারবো। একদিন পরপর প্রায় দেড় থেকে দুইশ কেজি পর্যন্ত ঢেঁড়শ এখন তোলা হচ্ছে। বর্তমানে কেজি প্রতি পাইকারী মূল্য ২৫ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করছি। শুরুতে আমরা বিক্রি করেছিলাম কেজি প্রতি ৯০ টাকা। তারপর কেজি প্রতি দাম ৪০/৪৫ টাকায় নেমে এসেছে। আসলে বাজারের এই দাম উঠানাম করে।

এখানে টিএসপি, পটাশ, পিজসাম এগুলো সার ব্যবসার করা হয়েছে বলে জানান বিষু।  

আশ্বিস মাসে এই জমিতে আমরা ধান রোপণ করবো। তার জন্য শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে এই ঢেঁড়শগুলো আমরা কেটে ফেলবো। পরবর্তীতে ধান কাটা শেষ হলে এই জমিতে অন্য কোনো সবজি লাগবো।  

অপর ঢেঁড়শ-চাষি অমর কপালি বলেন, আমরা যে ঢেঁড়শগুলো আজ কেজি প্রতি ২৫ টাকায় পাইকারী বিক্রি করে এসেছি, এটাই ব্যবসায়ীরা ডাবল দামে, কখনো কখনো ডাবল থেকে বেশি দামেও বিক্রি করে। সবজি পাইকার আর বিক্রিতারা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দাম বাড়ায়।  

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমরজিৎ সিং বলেন, এই এলাকার কৃষকদের ঢেঁড়শসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য আমরা নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষির উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক কৃষকের পাশে আছে।  

শ্রীমঙ্গলের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের কপালিপাড়া গ্রামটি কৃষির জন্য খুবই সমৃদ্ধ। এই গ্রামকে ঢেঁড়শ গ্রাম বলা হয়। এলাকার প্রায় ২শ বিঘা জমিতে ধানের পরিবর্তে কৃষকরা ঢেঁড়শ আবাদ করছেন। এতে করে কৃষকরা আর্থিকভাবে খুবই লাভবান হয়ে থাকেন। সব খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ থাকে।  

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।