ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

কৃষি

ভোক্তাদের মাঝে আমদানি নির্ভরতা কমাবে পটল চাষ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৪৩, অক্টোবর ৯, ২০২৫
ভোক্তাদের মাঝে আমদানি নির্ভরতা কমাবে পটল চাষ মাচাংয়ের ওপর ঝুলছে পটল/ছবি: বাংলানিউজ

পটল বাংলাদেশের একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। এটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি।

সাধারণত মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পটল উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। দেশে সাধারণত বারি পটল-১, বারি পটল-২ এবং বারি হাইব্রিড পটল-১ চাষ হয়ে থাকে। পটল চাষের ক্ষেত্রে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ূ ভালো। উচ্চ তাপমাত্রা এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রয়োজন। পানি জমে না এমন উঁচু বেলে-দো-আঁশ বা দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো।

আবহাওয়া বিবেচনায় মৌলভীবাজার জেলাসহ পুরো সিলেট বিভাগে বন্যামুক্ত ও পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা আছে এমন জমিতে পটল চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষণায়যুক্ত কৃষি বিজ্ঞানীরা।

ইতোমধ্যে পটল চাষাবাদের জন্য মৌলভীবাজার জেলার পরিবেশ ও মাটির আদ্রতা উপযুক্ত হওয়ায় আমদানি নির্ভর এই ফসলটি জেলাজুড়ে ব্যাপক উৎপাদনে নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রাথমিক গবেষণা ও যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন গবেষণা সংশ্লিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানীরা।

জেলা সদরের আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা সেখানে মাটি পরীক্ষা করে মাত্র তিন শতক জায়গার ওপর একাধিক মাচাং তৈরি করে পটলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করেছেন। প্রতিটি মাচাংয়ে পুরো মৌসুমে অন্তত তিন মণ অর্থাৎ ১২০ কেজি করে পটল হারভেস্ট করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তারা। এতে প্রাথমিক পরীক্ষায় তারা সফলও হয়েছেন।

আকবরপুর কৃষি গবেষণার সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পটল এ অঞ্চলে উৎপাদনে নিয়ে আসার মূল কারণ হলো, মৌলভীবাজার জেলায় পটল সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। এখানকার পটলের চাহিদা মেটাচ্ছে বগুড়া, রংপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো। আমদানি নির্ভর হওয়ার ফলে এ অঞ্চলে ট্রান্সপোর্ট খরচ বেশি হওয়ায় প্রতি কেজি পটল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে।

জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় পটল চাষের জন্য মাটির জাত ও আদ্রতা যাচাই শেষ করেছেন কৃষি গবেষকরা। এতে বারি-১ জাতের পটল চাষে ফলন আশানুরূপ ভালো হওয়ায় ২০২৬ সাল থেকে জেলার কৃষি উদ্যেক্তাদের মধ্যে পটল চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ বাণিজ্যিকভাবে পটল চাষ বাড়াতে কাজ করবে কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্টরা। তারা আশা করছেন ধীরে ধীরে পুরো জেলা চাষাবাদের আওতায় আসবে পটল।

কৃষি বিজ্ঞানী ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের দলগত মাঠ গবেষণার আলোকে সিলেটের মাটি ও আবহাওয়া পটল চাষে ভালো ফলন পাওয়ার প্রমাণ মিলে।

আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, সিলেট অঞ্চলের বাজারে যেসব পটল পাওয়া যায় তা সাধারণত উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসে। পরিবহন জটিলতার কারণে ফসল ফেটে পচে নষ্ট হয়, মূল্যও অনেক বেশি। সিলেটসহ মৌলভীবাজার জেলায় স্থায়ীভাবে পটল চাষ সম্প্রসারিত হলে সমৃদ্ধ হবে এ অঞ্চলের কৃষি। এসব কারণে আঞ্চলিক পর্যায়ে পটলের প্রয়োগিক গবেষণার ফলাফল এ অঞ্চলে পটল চাষের উপযোগী।

তিনি বলেন, মৌলভীবাজারের মাটি পটল চাষের জন্য উপযুক্ত। জেলায় ব্যাপক হারে পটল উৎপাদন শুরু হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি দামও কমে যাবে। আর তাতে করে লাভবান হবে কৃষক।

বিবিবি/এএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।