রাজশাহী থেকে: কচি আম ডাগর হতে শুরু করেছে। কিছুদিন পর থেকে পাক ধরতে শুরু করবে।
কয়েক মাসের পরিশ্রম ও বিনিয়োগের ফল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে পারলেই মুখে ফুঠবে সফলতার হাসি। সামনে শুধু প্রতিবন্ধকতা বৈরি আবহাওয়া, সঠিক দাম ও বাজারজাত করা। তবে বাজারজাত করা নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা।
পুঠিয়া উপজেলার আম চাষি শিহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় এক মাস হলো বৃষ্টির দেখা নাই। হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় হলে কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। আমের ফলনও গত বছরের তুলনায় বেশ কম।
গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ চাষি বলেন, ফরমালিনের দোহাই দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আম বাজারজাত করা যাবে না বা ফরমালিন আছে এমন অভিযোগে ট্রাকের পর ট্রাক আম এবারও যদি ধ্বংস করে দেয়া হয় তাহলে আমরা নি:শ্ব হয়ে যাবো। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হোক। চলতি মৌসুমে মানুষের তৈরি কোনো বিপর্যয় যেন আমাদের ওপর না পড়ে।
শিহাব উদ্দিনের মতো বাঘা, চারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝেও এমন বক্তব্য পাওয়া গেলো।
চারঘাট পৌরসভার সফল আম চাষি আলহাজ হাকিম বাংলানিউজকে বলেন, এ অঞ্চলে আমকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। এছাড়া আমের চাষ ও ব্যবসা করে অনেকের সারা বছরের খোরাক মেটে। তাই আম নিয়ে যেন কোনো মানুষের তৈরি দুর্যোগ না আসে।
এ চাষি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর হাত নেই, কিন্তু আমরা যারা সিদ্ধান্ত নিই তারা যদি সতর্ক হয়ে কী করলে ভালো হবে সেই পদক্ষেপ নিতে পারি তবেই সবাই খুশি হবেন। যেসব অসাধু ব্যবসায়ী কাঁচা আমের সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করে তাদের নজরদারিতে রেখে শাস্তি দিক।
আমচাষিদের দাবি, বাজারজাতের সময়ে নয় বরং আগে থেকেই পরিকল্পনা সাজিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তৃণমূল চাষিরা কখনো আমের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে বাজারজাত করে না।
তারা জানান, প্রশাসনের উচিত আগে থেকে সতর্ক থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে রাখা। কেননা অতীতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে অনেক সৎ আম চাষি ও ব্যবসায়ী আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
বাঘা উপজেলার আম চাষি সরাফত জানান, জাত ও আবহাওয়া ভেদে একেক সময়ে একেক আম পাকে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে চাষিরা কাঁচা আমও বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে দাম নিয়েও বিপাকে পড়তে পারেন তারা।
তবে আমের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হলেও আজও তেমন কোনো শিল্প গড়ে ওঠে না ওঠায় বেশ ক্ষোভও পাওয়া গেলো এসব অঞ্চলের চাষিদের মাঝে।
লকনা, আশ্বিনা, দেশি গুটি, খেসসাপাত, গোপাল ভোগ, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, ফজলিসহ নানা আমের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চল। আমের মৌসুমে হাজার হাজার মানুষের সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে আমের সঙ্গে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে।
অপরিপক্ক আমে কেমিক্যাল মিশিয়ে যেন কেউ বাজারজাত করতে না পারে সে জন্য নির্দিষ্ট গাছ থেকে আম সংগ্রহের ওপর সময় বেঁধে দেয়া হয় গত বছর। আর তার আগের বছরে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে হাজার হাজার টন আম ধ্বংস করা হয়। চাষিদের অভিযোগ, এতে নীরিহ ও সৎ চাষিরাও এসবের শিকার হয়ে আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, মে ২, ২০১৬
একে/জেডএম