ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

রংপুরের সুমিষ্ট হাড়িভাঙ্গা আম যাচ্ছে বিদেশেও

নজরুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৬
রংপুরের সুমিষ্ট হাড়িভাঙ্গা আম যাচ্ছে বিদেশেও ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর: রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় আম চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। ইতোমধ্যে এখানকার আম দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে।

বিশেষ করে হাড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বছর ২শ’ ২৫ কোটি টাকার আম উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। তবে আম সংরক্ষণসহ নানা জটিলতায় দর পতনের আশঙ্কায় রয়েছেন আমচাষিরা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খন্দকার মেজবাহুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৩ হাজার হেক্টর জমি হাড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন আম চাষের আওতায় এসেছে। এ বছর ২শ’ ২৫ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা সংশ্লিষ্টদের। আবহাওয়া ভালো থাকলে হাড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।

আর কয়েকদিন পর হাড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসবে। সুমিষ্ট হাড়িভাঙ্গা আমের কারণে অনেকেই রংপুরকে আমের এলাকা বলে থাকেন। রংপুর মহানগরীতে ঢুকতে পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জে আমের দৃশ্য চোখে পরে। সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামের মেঠোপথে সারি সারি হাড়িভাঙ্গা আম গাছ। রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম এখন দেশ ছেড়ে বিদেশেও ছড়িয়ে গেছে।

কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলার উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে এ জাতের আম চাষ করে অনেকেই ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। অন্য কোনো ফসলে খুব একটা লাভ না হওয়ায় প্রতি বছরেই বাড়ছে আমের এলাকা। চাষিরাও আগ্রহ নিয়ে আম চাষে এগিয়ে আসছেন। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় শিক্ষিত বেকার যুবকরাও ঝুঁকে পড়েছেন আম চাষে।

হাড়িভাঙ্গা ছাড়াও এ অঞ্চলে মিছরিভোগ, ফজলি, গোপালভোগ, কপিল বাঙ্গরিসহ নানা প্রজাতির আম চাষ হয় এখানে। এ আম বাগানগুলোতে প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ শ্রমিক সারা বছর শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

দামে কম হলেও চাহিদা থাকায় বাগান মালিকদের মুখে হাসি। মালিকরা বলছেন, রংপুরে এবার যে আমের ফলন হয়েছে, তা সারা দেশের মানুষের চাহিদা মেটাবে।

মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর আগাটারি গ্রামের মৃত. আজিজ উদ্দিনের ছেলে সুলতান মিয়া বলেন, এ বছর দুই একর জমিতে আম চাষ করেছি। আমের বাম্পার ফলন হয়েছে’।

মিঠাপুকুর উপজেলার বারঘরিয়া সর্দারপাড়া গ্রামের আলহাজ মো. আ. সালাম সরকার ‘আমের রাজা’ নামে খ্যাত। গত ৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষিপদক ২০১৬ লাভ করেন তিনি। বিভিন্নভাবে আরও অনেক পদক পেয়েছে তিনি।

মো. আ. সালাম সরকার বাংলানিউজকে জানান, এ বছর ১২ একর জমিতে আম চাষ করেন তিনি। ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করা যাবে।

উপজেলার জারুল্যাপুর নামাপাড়া গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে আজগর আলী বলেন, ‘তিন একর জমিতে আমবাগান করেছি। এ বছর সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে’।

জারুল্যাপুর জুম্মাপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তাক মিয়ার ছেলে রনজু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তিনি দুই একর জমিতে আমবাগান করেছেন। এ বাগান থেকে এ বছর অনেক টাকা আয় করবেন তিনি।

খোড়াগাছ জুম্মাপাড়া গ্রামের এ এস এম নুরুল আলমের ছেলে ময়নুল আনাম খাজা বাংলানিউজকে জানান, রংপুরের মিঠাপুকুরের হাড়িভাঙ্গা আম দেশ থেকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমি ১৩ একর জমিতে আমবাগান করেছি। গত বছর আম বিক্রি করেছি ৩০ লাখ টাকার। এ বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার বাগানের আম বিক্রি করবো ৪০-৪৫ লাখ টাকায়। আম বিক্রি করে অনেক উন্নতি করতে পেরেছি’।

আবহাওয়ার বৈরিতায় চলতি বছর হাড়িভাঙ্গার ফলন কম হওয়ার কথা বলা হলেও ৮০-৯০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের। তবে পুষ্ট আম বিক্রি করার আহবান জানিয়েছে চাষিদের প্রতি।

রংপুর সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আফতাব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘রংপুরের কৃষকরা যে পরিমাণে আমবাগান করছেন, তাতে আগামী ১০ বছর পর ধান চাষের জন্য জমি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বেশি লাভের আশায় আম চাষ করছেন তারা। তবে আমবাগানে ধানের চেয়ে অনেক বেশি লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা’।

‘এ বছর আমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। চাষিরা ফরমালিন ছাড়াই এ বছর ভালো আমের ফলন করে মুখে হাসির ছোঁয়া লাগিয়েছেন’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৬
‌এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।