ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

চড়া চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
চড়া চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা!

ঢাকা: ২০ রমজানের পর থেকেই মোটা ও চিকন চালের দাম বাড়ে। ক্রেতারা আশা করেছিলেন, ঈদের পরে হয়তো কমবে সব ধরনের চালের দাম।

কিন্তু ঈদের পরে আবারও সব ধরনের চালের দাম বাড়তি।

নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি মোটা চাল ৫ টাকা থেকে ৬ টাকা এবং চিকন চাল ২ টাকা থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। পোলাওয়ের চাল বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা। সামনে আরও বাড়তে পারে সব ধরনের চালের দাম।
 
ঈদের পরে এক টাকা দুই টাকা বাড়তে বাড়তে ২৬ টাকা মূল্যের মোটা গুঁটি স্বর্ণা ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৩০ টাকা দরের পারিজা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে। চায়না ইরি চালেও ৬ টাকা বেড়ে ৩৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চার টাকা বেড়ে আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকা দরে।  
 
ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে আনারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লে চলা যায়। কিন্তু চালের দাম বাড়লে চলা দায়। প্রতিমাসে ৪৫ থেকে ৫০ কেজি চাল লাগে। এতে করে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি গুণতে হয়। যা সংসারের ওপরে বাড়তি ঝামেলা’।
 
সরু ও চিকন চাল কিনতেও অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। প্রতি কেজি ‍চালের মূল্য দুই টাকা থেকে তিন টাকা বেড়েছে। গড়ে প্রতি কেজি সরু ও চিকন চাল কিনতে ৪৪ টাকা থেকে ৫৫ টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রতি কেজি মিনিকেট দুই টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকা, উত্তম মানের নাজিরশাইল ৪৮ টাকা থেকে ৫৫ টাকা, সাধারণ মানের পা‌ইজাম ও লতা ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা, উত্তম মানের পাইজাম ও লতা ৪২ টাকা থেকে ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
 
চালের আড়তগুলোর মালিকরাও অভিযোগ করে বলেন, কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে উচ্চদামে ধান-চাল ক্রয় করছে সরকার। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। বাজারের চেয়ে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে আগ্রহ বেশি মিল মালিকদের। আর এর প্রভাবে বাজারে কমেছে চালের সরবরাহ। ফলে রাজধানীর বাজারে প্রতিদিন বাড়ছে চালের দাম। সামনে আরও বাড়বে সব ধরনের চালের দাম।
 
পাইকারি চাল বিক্রেতা কারওয়ানবাজারের মুক্তা রাইসের মালিক আব্দুল আওয়াল বাংলানিউজকে বলেন, ‘চিকন ও মোটা সব চালের দামই বাড়তি। সরকার বাড়তি দামে চাল সংগ্রহ করছে। সরকার মোটা চাল ৩২ টাকা কেজি দরে কিনছে। ফলে মিল মালিকেরা আমাদের কাছে চাল না দিয়ে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করছে। সরকার চাল কেনা বন্ধ না করা পর্যন্ত প্রতিদিনই চালের দাম বাড়বে। কৃষককে বাঁচাতে নাকি ধান-চাল কেনা হচ্ছে। এখন তো কৃষকের ঘরে কোনো ধান নেই। সব ধানই মিল মালিকদের হাতে। সরকার সাধারণ মানুষকে মারতে এবং মিল মালিকদের আরও বড়লোক করার জন্যই বাড়তি দামে চাল কিনছে। সামনে চালের দাম আরও বাড়বে’।
 
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে সাত লাখ টন ধান ও ছয় লাখ টন চাল সংগ্রহ করবে সরকার। প্রতি কেজি ধান ২৩ টাকা ও চাল ৩২ টাকা দরে সংগ্রহ করা হবে। ৫ মে মাস থেকে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে, চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

সরকার মোটা চাল সংগ্রহ করছে বলে বাজারে দাম বাড়তি। কিন্তু এর প্রভাবে বেড়েছে চিকন ও সরু চালের দামও। ধানের সিজন না হওয়ায় চিকন চালের দামও বাড়ছে। সামনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন মিল মালিকেরা।

রশিদ মিনিকেট চালের হেড অব মার্কেটিং নাসির হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখনতো ধানের সিজন না। তাই চিকন চালের দাম বাড়তি, সামনে আরও বাড়বে। নতুন ধান কৃষকের ঘরে না আসা পর্যন্ত চালের দাম বাড়তেই থাকবে’।

মোটা ও চিকন চালের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়তি পোলাওয়ের চালের দাম। কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বেড়ে এখন ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক (এফপিএমইউ) নাসের ফরিদ বাংলানিউজকে বলেন, আগে মোটা চালের দাম ২৬ ছিল এটা নির্ধারণ করলে হবে না। এখন ৩২ টাকা দাম হয়েছে- এটাই সরকারের পলিসি। ৩২ টাকা থেকে যদি মোটা চাল ৩৬ টাকা হবে, তখনই আমাদের ভিন্ন পলিসি নিতে হবে। চালের দাম বাড়া-কমা নয় আমাদের ন্যাচারালিই ধরে নিতে হবে মোটা চালের দাম ৩২ টাকা। কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায় সে লক্ষ্যেই ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এক মাসের মধ্যেই সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে’।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।