সিলেট: খোলা আকাশের নিচে বস্তাভর্তি সার। পড়ে আছে যত্রতত্র, কোনোটি নালায়ও পড়ে আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহনের অভাব ও স্থান সংকুলানের কারণে এভাবে নষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকার সার। আর এ কারণে বন্ধ রয়েছে সার কারখানার উৎপাদন।
কারখানা ঘুরে দেখা যায়, স্থান সংকুলানের কারণে সার গুদামে রাখা যাচ্ছে না। হাজার হাজার মেট্রিক টন সার সংরক্ষিত এলাকায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। সেসব সার বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে পড়ছে নালায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রতিনিয়ত সার উৎপাদন হলেও সে তুলনায় সরবরাহ হচ্ছে না। আর তা কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতেই হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সার নষ্ট হওয়ার মূলে রয়েছে পরিবহন জটিলতা। পরিবহনে সরকারি-বেরসকারি একাধিক ঠিকাদার থাকলেও প্রভাব খাটাচ্ছে স্থানীয় ফয়ছল অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় প্রভাব ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিকে সার পরিবহনের দায়িত্ব দেয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যথারীতি সার পরিবহন করতে পারছে না, এমনকি অন্যদেরও সার পরিবহনে বাধা দিচ্ছে। কারখানার বিভিন্ন কাজেরও ঠিকাদার এই ফয়ছল অ্যান্ড কোম্পানি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে সার কারখানার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাগিয়ে নেয় এই কোম্পানি।
সে কারণে পরিবহনের একাধিক ঠিকাদার থাকলেও এ কোম্পানি একাই সার পরিবহনের দায়িত্ব নেয়। ফলে সার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সার সরবরাহ না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ে কারখানাই বন্ধ রাখার অভিযোগ ওঠেছে। এ অবস্থায় শাহজালাল সার কারখানা প্রতিদিন দুই কোটি টাকারও বেশি লোকসান গুনছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সার কারখানা সূত্র জানায়, প্রভাবশালী হওয়ায় ফয়ছল অ্যান্ড কোম্পানিকে বাদ দিয়ে সার কারখানার কোনো কাজ হয় না। পরিবহন কন্ট্রাকসহ এ কোম্পানির আওতায় এখনও কয়েক শ’ কোটি টাকার কাজ রয়েছে।
অথচ সার পরিবহনে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসি, বিআরটিসি ও বাংলাদেশ রেলওয়ে ছাড়াও স্থানীয় বেসরকারি বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নবাব অ্যান্ড কোম্পানি, কুটন ট্রেডার্স ও রেক্স মোটরস কোনো কাজই পাচ্ছে না।
মাস খানেক ধরে এ অবস্থা চলছে দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ ব্যক্তিকে সার পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়ায় এ জটলা সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিতেই মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফয়ছল অ্যান্ড কোম্পানি ফয়ছল আহমদ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কারখানার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রতিদিন ৮৫ ভাগ অর্থাৎ এক হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হওয়ার পর পরিবহনের অভাবে আটকে যাচ্ছে।
১৪ হাজার টাকা টন হিসেবে প্রতিদিন ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকার সার কারখানার ভেতরে কমপাউন্ড এলাকায় রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সার কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) সুলেমান আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, পরিবহন সংকটসহ বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান রয়েছে।
তবে এখনও কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে কারখানার জিএম (কমার্সিয়াল) মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, বর্তমানে গোদামজাতসহ এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি সার পড়ে রয়েছে। তাই ১০ দিন আগে থেকে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
‘প্রতিটি গোডাউন পরিপূর্ণ থাকায় উৎপাদিত বস্তাজাত সার গোদামের বাইরে রাখা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, সার পরিবহনে সবচেয়ে সহজ নদী পথ। কিন্তু এখানে নদী পথ একটু দূরে। আর সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগ নেই। যে কারণে প্রতিনিয়ত শ’ দেড় শ’ গাড়ি সংগ্রহ করা পরিবেশকদের জন্য কঠিন হয়ে যায়।
‘উৎপাদেনের তুলনায় সরবরাহ কম হওয়া ও টেকনিক্যাল কিছু কারণে গত ২৮ জুলাই থেকে সার উৎপাদন এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে’ বলে জানান কারখানার জিএম (অপারেশন) সৈয়দ শাহ কামরান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৬
এনইউ/এমএ