স্বাদু পানির চিংড়ি মৎস্য বীজ উৎপাদন করা হবে। এর আগে ১৯টি ক্ষুদ্র হ্যাচারি ও নার্সারি সংস্কার করে উৎপাদনক্ষম করা হবে।
৬১টি জেলায় স্বাদু পানির চিংড়ি সম্প্রসারণে উপযোগী চিংড়ি বীজ উৎপাদন করার লক্ষ্যে গড়ে তোলা হবে সব ধরনের অবকাঠামো।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, গলদা চিংড়ি বলতে সাতক্ষীরা অঞ্চলকে বোঝায়, এই ধারণা পরিবর্তন করতে চাই। পার্বত্য জেলা বাদে দেশের সব এলাকায় গলদা চিংড়ি উৎপাদন করবো। এই লক্ষ্যে দেশবাপী সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি। গ্রাম অঞ্চলের মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামের নারীরা গলদা চিংড়ি উৎপাদনে অধিক আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা মনে করি গলদা চিংড়ি মিষ্টি ও স্বাদু পানির মাছ। তবে, বাচ্চা ফোটার সময় লোনা পানি লাগে বাকি সময় মিষ্টি ও স্বাদু পানি হলেই চলে। ’
দেশব্যাপী চিংড়ি সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী, বগুড়া ও নওগাঁ জেলায় গলদার চাষ হচ্ছে। মানুষের মধ্যে আগ্রহও অনেক বেশি। আমরা সাধারণ মানুষকে বলছি, আপনারা গলদা চাষ করুন সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে। কোনো চাষি গলদা চাষ করতে চাইলে পোনা থেকে শুরু করে সব ধরনের আনুসঙ্গিক সহায়তা দেবো।
তিনি বলেন, গ্রামের মানুষকে বলছি গলদা চাষে ইচ্ছা পোষণ করুন বাকি কাজ টুকু আমাদের সরকার করে দেবে। গ্রামের রাস্তাঘাট ও বিদ্যুতের উন্নয়ন হয়েছে সুতরাং গলদা চিংড়ি চাষের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সব খানে। গ্রামে সুন্দর জীবন উপহার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই চিংড়ি চাষ ছড়িয়ে দেবো।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা এল্লাচরে, বরিশাল, গোপালগঞ্জ এবং খুলনায় একটি করে গলদা চিংড়ি প্রদর্শনী খামার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ৬১টি জেলায় চিংড়ি উৎপাদনের উপযোগী করে ১৮টি গলদা চিংড়ি ব্রুড ব্যাংক স্থাপন করে বিশেষ লরির মাধ্যমে ৬১টি জেলার নির্বাচিত পুকুরে মা চিংড়ি পরিবহন করা হবে।
‘স্বাদু পানির চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধানক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ, হ্যাচারি উদ্যোক্তা, বেকার যুবক ও গলদা নার্সারি প্রশিক্ষণ বাবদ প্রশিক্ষণের আওতায় আসবেন ৪৫ হাজার ৫৪০ জন। এই ব্যক্তিদের মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হবে দেশব্যাপী চিংড়ি চাষ। গলদা চাষে প্রশিক্ষপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রকল্পের আওতায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।
নির্দিষ্ট সংখ্যক পুকুর, বিল ও ধানক্ষেতের মালিক এমন ব্যক্তিদের আগে নির্বাচিত করা হবে। এসব ব্যক্তির তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়। এর পাশাপাশি দেশব্যাপী ১৮৫টি বেসরকারি পর্যায়ে প্রদর্শনী নার্সারি থাকবে। এসব নার্সারির চারপাশে শোভা পাবে চার হাজার নানা প্রজাতির গাছ। নার্সারিগুলো ব্রাইন অ্যান্ড ব্রুড পরিবহনে কেনা হবে প্রয়োজনীয় লরি।
এর পাশাপাশি গলদা চিংড়ির উৎপাদন ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে উত্তম চাষ অনুশীলন উত্তম ব্যবস্থাপনা উদ্যোগও থাকছে। প্রকল্পের আওতায় থাকছে মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গলদা চিংড়ি হ্যাচারি ও খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা। ফলে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তা আরও বৃদ্ধি করা যাবে বলে মনে করে মৎস্য অধিদফতর।
দেশব্যাপী গলদা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকবে। জুন ২০১৮ সালের মধ্যেই ৬২ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা খরচ করে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারিত হবে দেশব্যাপী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৭
এমআইএস/পিসি