এবার এই চরের মানুষের উৎপাদিত পণ্য বাজারের মূলধারায় নিয়ে আসতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের উত্তর ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের দশ জেলার চরের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।
মূলত চরের বাসিন্দাদের ভাগ্যের পরিবর্তন কার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল প্রায় ১৩ বছর আগে। চরের বসতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন চলছে দ্রুত গতিতে। প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিল সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম এবং জামালপুর জেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দারিদ্র্যবিমোচন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের উদ্যোগ।
পরবর্তী সময়ে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, টাঙ্গাইল এবং পাবনা জেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের এই কর্মসূচিতে যুক্ত করে দারিদ্র ও বিপর্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) আর্থিক সহায়তায় ‘চর জীবিকায়ন কর্মসূচি’ নামের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সফল্য পাওয়া যায়। বড় পরিসরে প্রকল্প বাস্তবায়নের রক্ষ্যে ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত নেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৬১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় মূলত নানা ধরনের ফসল উৎপাদনের নানা পদ্ধতি শেখানো হয়।
২০১৩ সালের মে মাসে ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চরে দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি শুরু হয়। নভেম্বর ২০১৬ সালে কর্মসূচিটি সফলভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ছিলো।
কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চরের বাসিন্দাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা দেওয়া। মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ, তথ্য, ভাল বাজার এবং যথোপযুক্ত আর্থিক সেবাসমূহ চরের বাসিন্দাদের কাছে আরো সহজলভ্য ও টেকসই করা।
উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের জন্য চরের সুবিধাজনক স্থানে ঘাট নির্মাণ করে চরের মহিলাদের আয় ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লী উন্নয়ন একাডেমি-র (আরডিএ)।
আরডিএ’র পরিচালক ড. একেএম জাকারিয়া বাংলানিউজকে বলেন, চরের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। এখন চরে প্রচুর পরিমাণে আলু, ভূট্টা, মরিচ ও পাট চাষ করা হচ্ছে। কৃষকদের চাষ পদ্ধতিরও উন্নয়ন করা হচ্ছে। এসব কৃষিপণ্য বাজারজাত করার লক্ষ্যে আমরা ১৯টি ভাসমান ঘাট নির্মাণ করেছি।
তিনি বলেন, চরের উৎপাদনশীল বাসিন্দাদের ফসল ও প্রাণিসম্পদ (প্রাথমিকভাবে গরু) উৎপাদনের জন্য উন্নয়ন উপকরণ ও উৎপাদন পদ্ধতি আরও সহজ করবো। আউটপুট মার্কেটের সঙ্গে চরের উৎপাদনশীল বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগ স্থাপন এবং তারা যাতে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্যে তা বিক্রি করতে পারে সে উদ্যোগও নেওয়া হবে। উন্নত ও মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য যথোপযুক্ত আর্থিক সেবাসমূহ চরের বাসিন্দাদের কাছে সহজলভ্যও করা হবে। ’
আরডিএসূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজ আরও বড় পরিসরে বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় বেড়ে প্রায় ৯৪ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। সময় আবারও তিন বছর এক মাস বাড়ছে। প্রকল্পটিতে আরও তিন মিলিয়ন (৩০ লাখ) সুইস ফ্রাঁ অনুদান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে চরের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আর শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে বলে মনে করে আরডিএ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৭
এমআইএস/জেএম