এতে বন্যা থেকে বীজতলা রক্ষা পাবে। অন্যদিকে এসব বেডে উৎপাদিত চারা অল্পদিনেই আমনের জমিতে রোপণের উপযোগী হবে।
আর এভাবেই নদী ও বিলের পানিতে ভাসমান বেডে বীজতলা ও শাকসবজি আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নে কাশোরারচর বিলে এমন ইতিবাচক চিত্রই দেখা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের অনেক এলাকায় প্রতিবছর আমন ধানের বীজতলা আগাম বন্যায় পানির নিচে পড়ে বিনষ্ট হয়ে থাকে। চারার অভাবে কৃষকরা সময়মতো আমনের আবাদ করতে পারেন না। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। এ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে এবছর করিমগঞ্জ, তাড়াইল, ইটনা, মিঠামইন, নিকলী, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর ও ভৈরবে ১৪৬টি বেডে আমনের বিনা-৭ জাতের ধানের বীজতলা করা হয়েছে।
নদী ও বিলের পানিতে কলা গাছের ভেলায় কচুরিপনা পচিয়ে এ বীজতলা করা হয়েছে।
পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিটি বেডে দেড় কেজি করে বিনা-৭ জাতের আমনের বীজ বপন করা হয়েছে। স্বাভাবিক জমিতে বীজ বপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মতো সময় লাগে জমিতে চারা রোপন করতে। অথচ ভাসমান বেডে উৎপাদিত চারা ১০ থেকে ১২ দিন পরেই জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়। এতে সময়ও বাঁচে। খরচও কম। সেইসঙ্গে তা পরিবেশবান্ধব।
আমন ধানের বীজতলার পাশাপাশি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভাসমান বেডে সবজির চাষও। ভাসমান বেডে সবজি চাষে কোনো সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ফলে কোনো খরচ ছাড়াই উৎপাদিত হচ্ছে ঢেঁড়শ, লাল শাক, পালং শাক, ডাঁটা শাক, বরবটিসহ নানান জাতের সবজি। বিষমুক্ত থাকায় বাজারে এসব সবজির দাম ও কদর বেশি। স্বাভাবিক সবজির চেয়ে দাম বেশি থাকায় কৃষকরা বেশ লাভের মুখ দেখছেন। অনেকেই এ বিলে এসে দাম দিয়ে সবজি কিনে নিচ্ছেন।
এই কাজে কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়োজিত কৃষি কর্মকর্তারা চাষাবাদের কৌশল ও প্রয়োগের বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।
কাশোরারচর বিলের কৃষক ফয়েজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এবার ভাসমান বীজতলার চারাও হয়েছে বেশ ভালো। এসব বীজতলায় কোনো সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়েনি।
রঘুখালি পাঠানপাড়ার কৃষক আমিরুল ইসলাম রতন বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার কারণে আমনের বীজতলা প্রায় সময় নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য এবছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছি। ভালো ফল পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বীজতলায় আলাদাভাবে কোনো সার ও পানি দিতে হয় না। বীজতলায় বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করবো। বন্যা আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আশা করছি, এবার লাভের মুখ দেখবো।
এসব ফসলের চাষাবাদের বিষয়ে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা হামিদুল হক ও উম্মে কুলসুম বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রথম ভাসমান বীজতলা তৈরি করে কৃষক বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজে পেয়েছে। আর বিষমুক্ত ভাসমান শাক-সবজি করে অনেকটা বেকারত্ব দূর হয়েছে।
ভাসমান বীজতলা এবং ভাসমান সবজি চাষের প্রতি দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে বলে উভয় কর্মকর্তা জানান।
কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বন্যাদুর্গত ও জলাবদ্ধ এলাকায় যাতে রোপা আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকটি মাথায় রেখে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে বীজতলা করায় খরচ কম পড়ছে। সেইসঙ্গে এটা পরিবেশবান্ধবও।
তিনি আরো জানান, ভাসমান বীজতলায় সবজির আবাদ করে কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারছেন। আগামীতে আরো বেশি বেশি ভাসমান বেডে বীজতলা ও সবজির আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়:১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এনআইকে/জেএম