এবার বড় পরিসরে ঢেঁড়স,পুঁইশাক, বরবটি, শশা, করলা, হলুদসহ বেশ কয়েকটি সবজি ও মসলার উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের চাষ হবে পানির ওপরে।
বড় পরিসরে ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অনেক স্থানেই বছরে একটিমাত্র ফসল হয় আর বাকি সময় থাকে জলাবদ্ধ অবস্থায়। এসব স্থানে পানির ওপরে কচুরিপানা দিয়ে ছোট মাচা তৈরি করা হবে। মাচায় সারসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ দিয়ে সহজেই মসলা ও সবজির চাষ করা হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘জনসংখ্যা বাড়ায় প্রতিনিয়তই আমাদের ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। বাড়তি চাহিদা পূরণে জলমগ্ন পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে এবং নদী, খাল ও বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি-মসলার চাষ করবো। ভাসমান মাচা তৈরির এ পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছেন আমাদের গবেষকরা’।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবারের (১৭ অক্টোবর) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, , প্রথম ধাপে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে এবং দ্বিতীয় ধাপে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ঝালকাঠি, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, সিলেট, হবিগঞ্জ, নাটোর, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হঠাৎ বন্যায় ফসলের ক্ষতি ঠেকানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও মোকাবেলা করবে এ প্রকল্প। এতে জোর দেওয়া হচ্ছে গবেষণার ওপরে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপ্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে কৃষিখাতের। এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ওইসব অঞ্চলের মাটি-পানিতে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
এছাড়া জলমগ্নতা, উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা এবং একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য অনেক স্থান জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যায় প্রায় সময় বোরো ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই স্থানভিত্তিক সৃজনশীল কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এর সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছে এ প্রকল্প।
তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাসমান বেডে মসলা ও সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন দেশের অনেক কৃষক।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১২ হাজার কৃষক ভাসমান পদ্ধতিতে সবজির চাষ করেন। উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করে তারা এখন স্বাবলম্বী। ভাসমান পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ মাটিবিহীন ও পানির ওপরে শাক-সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। এতে ব্যবহৃত হয় না কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এমনকি চাষের জন্য প্রয়োজন পড়ে না বাড়তি কোনো জমিরও। মূলত হাওর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভাসমান পদ্ধতিটি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর