সামান্য বাতাসেই নিচের দিকে নুয়ে পড়তে চায় দানাভর্তি গাছের শীষগুলো। কিন্তু কোথাও যেন একটু বাধা থাকায় ক্ষেতের গাছগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ব-মহিমায়।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কৃষক এবার সেই ধান গোলায় ভরতে শুরু করেছেন। বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সোনালী স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেছেন কৃষক।
উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডারখ্যাত জেলা বগুড়া। সেই জেলার মাঠে মাঠে চলছে রোপা-আমন ধান কাটার উৎসব।
এদিকে উৎপাদিত ফসলের ভাল দাম পাওয়ায় কৃষক অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। অনেক বাধা বিপত্তির পরও বিঘাপ্রতি ধানের ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। সবমিলে ভাল ফলন ও বাজারে ধানের ন্যায্য দাম থাকায় বেজায় খুশি কৃষক।
বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার চলতি মৌসুমের রোপা-আমন চাষি ও সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে ওঠে আসে এমনই তথ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাকডাকা ভোর। চারপাশটা তখনও অনেকটা কুয়াচ্ছন্ন। শীতের তীব্রতাও একেবারে কম না। এরমধ্যে দলবেধে আইল ধরে কৃষক ছুটছেন জমিতে। দলবেধেই তারা কাস্তে হাতে নেমে পড়েন ক্ষেতে। ভোরের আলো ফুটতেই আস্তে আস্তে সূর্যের তাপ বাড়তে থাকে। তাপ থেকে বাঁচতে মাথায় মাতুল পড়ে নেন অনেক কৃষক।
ধান কেটে আঁটি বেঁধে ক্ষেতের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়। এভাবে সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। তখন শুরু হয় ভাড়ে করে সেই আঁটি বাড়ি নেওয়ার পালা। এরপর বাড়ির উঠোনে আবার কোথাও কোথাও ক্ষেতের পাশের রাস্তায় মাড়াই কাজ শুরু করা হয়। মাড়াইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয় ভুত (স্থানীয় ভাষায়) মেশিন। এ কাজে কৃষাণীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন কৃষক ইকবাল হোসেন। সপ্তাহখানেক আগে ক্ষেতের ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন।
ওই কৃষক বাংলানিউজকে জানান, বিআর-৪৯ ও মিনিকেট জাতের ধান লাগিয়েছেন। চলতি মৌসুমে ফসল লাগানোর পর থেকে অনেক ধকল সামাল দিতে হয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এরপরও বিঘাপ্রতি ১৭-১৮ মণ হারে ফলন হচ্ছে। বাজারদর বেশ ভাল।
আব্দুল মজিদ, বুলু মিয়া, মিজানুর রহমানসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে প্রতি মণ বিনা-৭ জাতের ধান ৮৮০-৯২০ টাকা, পাজাম ১০৫০-১১২০ টাকা, স্বর্ণা-৫ ৮৭০-৯০০ টাকা, সম্পা ১০৮০-১১০০ টাকা, বিআর-৪৯ ১০০০-১০৫০, মিনিকেট ১১০০-১১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে দু’দফা বন্যার পরও এ জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি ধান -৪৯, ব্রি ধান -৫৮, মিনিকেট, ব্রি ধান -৩৩, বিনা -৭ জাতের ধান অন্যতম।
তিনি আরো জানান, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬৫৬ মেট্রিকটন চাল। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলনও বেশ ভাল হচ্ছে। এছাড়া দামও ভাল পাচ্ছেন কৃষক। সবমিলে চলতি মৌসুমেরোপা-আমন ধানে বাম্পার ফলন হবে বলেও যোগ করেন কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এমবিএইচ/এসএইচ