কৃষি বিভাগ বলছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার পানিফল চাষের পরিধি বেড়েছে নাটোরে। এখানকার উৎপাদিত পানিফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
নাটোরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খাল-বিল, পুকুর কিংবা রাস্তার ধারে জলাভূমিতে ভেসে আছে রাশি রাশি সবুজ গোলপাতা। পাতার নিচে ধরে আছে থোকা থোকা লাল, নীলাভ সবুজ বা কালচে সবুজ রংয়ের পানিফল।
কেউ সংগ্রহ করছে ফল, কেউ বা রাস্তার পাশেই ব্যস্ত তা বিপণনে। ফলের উৎপাদন, উত্তোলন আর বিপণনে ব্যস্ত এখন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। পুরো এলাকা জুড়ে যেন পানিফল উৎসব চলছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
পানিফল চাষিরা জানান, মণ প্রতি পানিফলের পাইকারি মূল্য এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা। তবে শুরুতে মণ প্রতি এই ফল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার টাকায়। বিঘায় দুই থেকে আড়াই মেট্রিক টন ফলন হয়। সে হিসেবে প্রতি হেক্টরে ১৮ থেকে ২০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন হয়। বিঘায় চাষাবাদে খরচ হয় সাত থেকে আট হাজার টাকা। খরচ বাদে বিঘায় আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
সদর উপজেলার বড়ভিটা এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বাদল বাংলানিউজকে জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছেন তিনি। বিঘায় উৎপাদন গড়ে ৫০ মণ। খরচ বাদে অন্তত ৪০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
একই কথা জানালেন, নলডাঙ্গার মাধনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াদুদ, রিপনসহ আরো অনেকে।
একই এলাকার কৃষক বাদল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে অন্তত ১২০ মেট্রিক টন পানিফল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ফল চাষে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে একদিকে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন, অপরদিকে বেকারত্বও দূর হচ্ছে।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সামান্য সার ব্যবহার, জমি প্রস্তুত, পানিফল সংগ্রহ এবং কীটনাশক স্প্রে করতে খরচের পরিধি অত্যন্ত সীমিত। তাই অনেক কৃষক নিজস্ব বা ইজারা নেওয়া জলাভূমিতে পানিফল চাষ করছেন।
কৃষি বিভাগ ও উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম: Trapa natans. এটি Trapaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ইংরেজিতে Water chestnut হলেও স্থানভেদে Water caltrop, Buffalo nut বা Devil Pod নামে পরিচিত। বাংলায় বলে পানিফল বা শিংড়া।
বাংলা আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত চারা লাগানো যায়। চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৬৫ দিন পর অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ফুল আসে। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পানিফল পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলায় ছয় হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। ফসল চাষের অনুপোযুক্ত জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে অনেক চাষি সফল হয়েছেন।
তিনি বলেন, কৃষি উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এই পানিফল। তবে এক্ষেত্রে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত করণ, সার ব্যবস্থাপনা, বালাই ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ পরামর্শ দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এসআই