ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

‘সাদা সোনা’য় ভাগ্য গড়েছেন চলনবিলের চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৭
‘সাদা সোনা’য় ভাগ্য গড়েছেন চলনবিলের চাষিরা সূর্য ওঠার আগেই মাঠে মাঠে আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন রসুনচাষিরা। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: কুয়াশাঘেরা শীতের ভোর। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া উপেক্ষা করেই ফসলের মাঠে নেমেছেন কৃষকেরা। জমিতে পুঁতছেন রসুনের কোয়া (কোষ)। এরপর নাড়া (খড়) দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন রসুনের ক্ষেত। সমান তালে কাজে নেমে পড়েছেন নারীরা, স্থানীয়দের পাশাপাশি এসেছেন বাইরের শ্রমিকেরাও।

নরম মাটি রোদে শক্ত হলে রোপণে বিপত্তি দেখা দেবে, ফলনও ভালো হবে না। তাই সূর্য ওঠার আগেই মাঠে মাঠে আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন রসুনচাষিরা।

নাটোরের গুরুদাসুপর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলাসহ পুরো চলনবিল জুড়ে এভাবেই চলছে বিনা হালে রসুন চাষের মহাকর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ রোপণ শেষ হয়েছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট রসুন কেনা-বেচায় সরগম হয়ে উঠছে হাট-বাজারগুলোও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিল থেকে পানি নেমে গেছে। জেগে উঠছে পলি মিশ্রিত উর্বর ফসলি জমি। আমন ধান কাটা-মাড়াই ও খড় পরিষ্কারের কাজও শেষ। এ সময় নতুন করে জমি চাষের প্রয়োজন নেই। তাই কাদাযুক্ত নরম মাটিতেই দ্রুতগতিতে চলছে বিনা হালে রসুনের কোয়া রোপণের কাজ।

কাদামাটির একই জমিতে বিনা হালে রসুন,  মুগডাল ও রোপা আমনের চাষ হয়। এতে উৎপাদন খরচ ও সময় কম লাগে।

গত এক দশক ধরে এ পন্থায় রসুনের আবাদে বেশ লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। ফলে পাল্টে গেছে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাষাবাদও।

এখন রসুনকেই এলাকার কৃষকদের অর্থনৈতিক মুক্তির মূল চালিকাশক্তি বলে মনে করা হচ্ছে। চলনবিলের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসলও এই রসুন। এখানকার উৎপাদিত রসুন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত রসুন।  ছবি: বাংলানিউজএজন্য স্থানীয়ভাবে রসুন ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়,  চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৮০ হেক্টরে বিনা হালে চাষসহ মোট ২৫ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সদর উপজেলায় এক হাজার হেক্টর, গুরুদাসপুরে ১০ হাজার হেক্টর, লালপুরে ৩৫০ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ১১ হাজার ৮৪৫ হেক্টর, সিংড়ায়  এক হাজার ৫০০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৮৫০ হেক্টর ও বাগাতিপাড়ায় ২৫০ হেক্টর জমি।

গত মৌসুমে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ২০ হেক্টর জমি। এর অনেক বেশি ২৫ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়।
 
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও  লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রসুন চাষ ও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম।

চাষিরা জানান, বিনা চাষে কাদাযুক্ত পলি মাটিতে রসুনের আবাদে খরচ ও সময় কম লাগে, ফলনও ভালো হয়। রোগ বালাই-পোকার আক্রমণও তেমন হয় না। বিঘায় ফলন হয় ১৫ থেকে ২০ মণ, বিক্রি হয় এক থেকে সোয়া লাখ টাকায়।

চৈত্র মাসে রসুন তুলে নিয়ে বিনা জাতের মুগডাল ঘরে তুলতে পারেন চাষিরা। ফলে রোপা আমনসহ বছরে তিনটি ফসল হয় একই জমিতে।

এবার প্রতি বিঘা রসুন চাষে বীজ সার-কীটনাশক, জমি প্রস্তুত-রোপন,  শ্রমিকসহ কৃষকের সার্বিক ব্যয় হচ্ছে ১৮-২০ হাজার টাকা। আর ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষিদের এক বিঘা জমিতে (বর্গা) লিজ বাবদ আরো ১৪ হাজার টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলার চরকাদহ গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন ও আব্দুল মালেক জানান, আগে ধান, গম, সরিষা, কালাই, মসুর ও সবজির আবাদ হতো। কিন্তু অতি বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে তা ক্ষতি হতো।
 
ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট রসুন কেনা-বেচায় সরগম হাট-বাজারগুলোও।  ছবি: বাংলানিউজ সেক্ষেত্রে বিনা চাষে রসুন চাষ অনেকদিক দিয়েই লাভজনক ও দুর্যোগ সহনীয়। অন্য আবাদের তুলনায় রসুনে বেশি লাভও হয়। এ বছর তারা রসুনের সঙ্গে সাথি ফসল বাঙ্গির আবাদও করবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।