জনৈক ব্যক্তির জায়গা ভাড়া নিয়ে আড়তটি গড়ে তোলা হয়। ঢাকা-নাটোর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ গোলচত্বর থেকে কিছুটা পশ্চিমে গিয়ে দক্ষিণে নেমে গেলেই আড়তটির দেখা মিলবে।
ভোর ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এবং সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। দুই দফায় মোট ৬ ঘণ্টায় এই আড়তে প্রায় তিন শতাধিক গাড়ি মাছ বিক্রি হয়। যার গড়ে বর্তমান বাজার মূল দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকা। তবে গেলো বছরের এ সময়ে একই পরিমাণ মাছের দাম ছিলো প্রায় আড়াই কোটি টাকার মতো।
মহাদেব রাজবংশী, স্বদেব রাজবংশী, বিরেন, সুলতান, সিরাজুলসহ একাধিক আড়তদারের সঙ্গে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের কথা হলে উঠে আসে এমনই সব তথ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ-নাটোর মহাসড়ক থেকে দক্ষিণে একটি সরু সড়ক নেমে গেছে। সামান্য দূরুত্বের সড়কটি খানা-খন্দে ভরা। প্রায় সময়ই সড়কটিতে ছিপছিপে পানি জমে থাকে। মহাসড়ক থেকে মাছভর্তি গাড়িগুলো এই সড়ক হয়ে আড়তে প্রবেশ করে।
আড়তের মাঝখানে ফাঁকা রেখে চারপাশে শতাধিক ঘর গড়ে তোলা হয়েছে। ভেতরের পুরো অংশে ইট বিছানো। এসব ঘরের ওপরে রয়েছে টিনের ছাউনি। সিংহভাগ ঘরের পেছনটা ফাঁকা। বাঁশ বা সিমেন্টের খুঁটির ওপর ঘরগুলো দাঁড়ানো। প্রত্যেক ঘরের সামনের অংশে ঝুলে থাকে পাল্লা আর বাটখারা। আড়ত চলাকালে যেন পা ফেলানোর জায়গা থাকে না ভেতরটায়। এই আড়ত ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মুদি দোকান।
আড়তদার মহাদেব রাজবংশী ও স্বদেব রাজবংশী বাংলানিউজকে জানান, ভোরের বাজার বাংলা (স্থানীয় ভাষায়) মাছের জন্য খ্যাত এই আড়ত। গাড়িতে ভরে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় তাজা মাছ আনা হয়। এর মধ্যে রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভার, বিগহেড, পাবদা, গোলসা, শিং, মাগুর অন্যতম। সকাল ৬টা থেকে শুরু করে ৮টা পর্যন্ত এসব মাছ বেচাবিক্রি হয়। ভোরের বাজারে এই আড়তে কমপক্ষে ১শ’ গাড়ির মতো মাছ বিক্রি হয়।
আড়তদার বিরেন, সুলতান, সিরাজুল বাংলানিউজকে জানান, সকাল ১০টা থেকে শুরু বাজারে প্রায় ২শ’ গাড়ির মতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আসে। এরমধ্যে অন্যতম পাঙ্গাস, তেলাপিয়া (মনোসেক্স) ছাড়াও কিছু করে বাংলা মাছ থাকে।
তবে সব মাছই জ্যান্তভাবে এই আড়তে নিয়ে আসেন মাছচাষিরা। কিন্তু চাষিরা মাছের তেমন একটা দাম পাচ্ছেন না। এতে তাদের পাশাপাশি আড়তদাররাও ব্যবসায় লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন, যোগ করেন এসব আড়তদার।
তারা আরও জানান, শতাধিক আড়তে প্রায় পাঁচ শতাধিকের মতো শ্রমিক কাজ করেন। এই আড়তে দুই দফায় কেনাকাটা করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিত প্রায় তিন হাজারের অধিক ব্যাপারি আসেন। কিন্তু মাছের বাজার পড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ব্যাপারি আসা বেশ কমে গেছে।
অথচ মাছের আমদানি বরাবরের মতোই রয়েছে। এটাও মাছের দাম কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আয়নাল হোসেন, জহুরুল ইসলাম, রমেশ চন্দ্রসহ একাধিক ব্যাপারি বাংলানিউজকে জানান, জ্যান্ত মাছ কেনার জন্য এই আড়তে আসা। কারণ জ্যান্ত মাছের আড়ত হিসেবে এ আড়দটির ব্যাপক পরিচিত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ এই আড়তে পাওয়া যায় নিয়মিত। রয়েছে যথেষ্ট নিরাপত্তা। দৌরাত্ম্য নেই চাঁদাবাজদের। চাহিদামতো মাছ কিনে নিরাপদে নিজ গন্তব্যে ছুটতে পারেন ব্যাপারিরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭
এমবিএইচ/এমজেএফ