কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক বাবলু এবার দেড় বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। মরিচের ক্ষেতেই ৬০০টি পেঁপে গাছও রয়েছে।
মরিচ-পেঁপে ছাড়াও দুই বিঘা জমিতে বেগুন, তিন বিঘায় বাঁধাকপি ও ফুলকপি, দশ কাঠায় সিম, দুই বিঘায় নাবি লাউ, দশ কাঠায় আগুড় লাউ, দশ কাঠায় টমেটো, দশ কাঠায় মুলা, এক বিঘায় পালং শাক, ১৫ কাঠায় মটর শাক, ৫ কাঠায় ধনেপাতা এবং দুই হাজার কলাগাছের চাষ করেছেন বাবলু কোম্পানি। কীটনাশক প্রয়োগ না করায় তার উৎপাদিত সব ধরনের সবজিই বিষমুক্ত।
গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে বাবলু কোম্পানিকে তার ক্ষেতে মরিচ তুলতে দেখা গেছে। এলাকার ১২ জন দরিদ্র নারীকে কেজিপ্রতি ১০ টাকা হারে মরিচ উত্তোলনের কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মরিচ বাজারের সেরা। বাজারে নিয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের ভিড় জমে যায়। এখনতো জমি থেকেই ৮০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। আমি শুধু ওজন করে দেই’।
‘সপ্তাহে দু’দিন মরিচ ওঠাই। এতে গড়ে ৭০-৮০ কেজি করে মরিচ পাওয়া যায়। নাবি জাতের হওয়ায় যখন সকলের গাছ মারা যাবে, তখনও আমার জমিতে মরিচ পাওয়া যাবে। কয়েকদিন আগেও আমি ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আবারও করবো বলে আশা করছি’।
বাবলু বলেন, ‘উৎপাদিত সবজি বাজারে নিতে একটি ভ্যান কিনেছিলাম। কয়েকদিন আগে সেটি চুরি হয়ে গেছে। মরিচ বিক্রি করে ফের ভ্যান কেনার ইচ্ছে আছে’।
বাবলুর ক্ষেতে কাজ করা বিলকিস বলেন, ‘সপ্তাহে দু’দিন এই ক্ষেতের মরিচ তুলে দেই। যারা সকালে আসেন, তারা বেশি তুলতে পারেন। আমি বাড়ির কাজ শেষ করে আসি। তারপরও ৬০-৭০ টাকা করে আয় হয়’।
আরেকজন নারী শ্রমিক সোনা ভানু বলেন, ‘বাড়িতে বসেই তো থাকি। এখানে মরিচ তুলে দিলে হাট-বাজারের টাকাটা হয়’।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘বাবলু কোম্পানি উপজেলার বিষমুক্ত সবজিচাষিদের মধ্যে একজন মডেল। বিভিন্ন সময় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এর আগে বাবলু কোম্পানি পাটের বিকল্প ঢেঁড়শের আঁশ উদ্ভাবন করেন। আতা গাছের ছাল ও নিমপাতা জৈব বালাইনাশক হিসেবে জমিতে ব্যবহার করেন। কলমের মাধ্যমে বেগুন গাছে টমেটোর চাষও করেছিলেন তিনি'।
‘চলতি মৌসুমে মরিচের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। নাবি মরিচ করেছেন বাবলু কোম্পানি। এতে ভালো দাম পাবেন তিনি’।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমির মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় ৮১৬ হেক্টর, মিরপুরে ৮০ হেক্টর, ভেড়ামারায় ১০০ হেক্টর, খোকসায় ৩৫ হেক্টর ও কুমারখালীতে ৮৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদফতরের বাজার কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, মরিচের দাম বেশ ভালো, বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
এএসআর