ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

মডেল চাষি ‘টমেটো-কাইয়ুম’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
মডেল চাষি ‘টমেটো-কাইয়ুম’  আবদুল কাইয়ুমের নিজের ক্ষেতের টমেটো, ছবি: বদরুল আলম

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে ফিরে: এক সময় কিছুই ছিল না তার। শূন্য হাতে স্বপ্ন ছিল শুধু। সে স্বপ্নের বীজ বুনতে বুনতে একদিন গজিয়েছে বাস্তবের চারা। অঙ্কুরিত হয়েছে স্বপ্নকণা। স্বপ্ন আর বাস্তবতার দোলাচলে তার নামটি সফলতা পেয়েছে ‘টমেটো কাইয়ুম’ নামে। 

সেটি চল্লিশ বছর আগের কথা। মাত্র ছোট একটি ঘরে (যে ঘরটিতে এখন পনেরোটি গরুর খামার সেখানের পরিত্যক্ত জমিতে) সর্বপ্রথম যে ফলসটি বপন করেছিলেন তার নাম টমেটো।

সেই টমেটো বছর বছর বেড়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। শুধু টমেটো নয়, অন্য মৌসুমী সবজিও যোগ হয়েছে তাতে।  

তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বাগুলিপাড়া এলাকার সফল কৃষক আবদুল কাইয়ুম। বর্তমানে প্রায় ১২ একর জায়গায় গড়ে তুলেছেন বিশাল ফলসম্ভার।  

নিজের ক্ষেতের সিমে কাইয়ুয়ের মমতার পরশ, ছবি: বদরুল আলম সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বাগুলিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল ধান, শিম, টমেটো, বেগুন, কলা, সুপারি, গরু, হাঁস, মাছ এ সবকিছু গভীর যত্নে লালিত। গরুর খামার সংলগ্ন বিশাল উঠোনজুড়ে গোবর সার হিসেবে রূপান্তরিত করতে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক ডজন শ্রমিক দৈনিক কর্মে নিয়জিত।  

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, জমিটিকে কিছুতেই ফেলে রাখেন না এই উদ্যমী কৃষক। দেখা গেলো, টমেটো গাছের নিচেই করলা গাছ লাগিয়ে রাখা হয়েছে। টমেটো গাছগুলো ফলন ধরে শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যাবে অন্য একটি ফসল।  

আবদুল কাইয়ুমের নিজের ক্ষেতের শিমএ যেন ফসলপ্রজন্মের দারুণ খেলা! একটি ফসল ফলসম্ভারে মুখরিত হয়ে একসময় মৃত্যুর মুখে ঝরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য একটি ফসল পরিপূর্ণ হয়ে ফলদান করে কৃষকের হাসি ফোটাতে থাকবেই।  

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ বলেন, আবদুল কাইয়ুম আমাদের এলাকার মডেল চাষি। তিনি টমেটো কাইয়ুম নামেই বেশি পরিচিত। সারাবছর নিচু জমিতে টমেটো চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এ অঞ্চলে সাথী-ফসলেরও উৎপাদনকারী তিনি।  

আবদুল কাইয়ুমের নিজের ক্ষেতের বেগুনশায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অপর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রযুক্তি ও কৃষিজাত বিভিন্ন উপাদান দিয়ে আমরা আবদুল কাইয়ুমকে সাহায্য করি। ধানক্ষেতের নিচু জমিতে তিনি শিম চাষ করেছেন। বেশিভাগ ফসলে গোবর সার দেওয়ার ফলে তার উৎপাদিত ফসলগুলো অত্যন্ত প্রাকৃতিক।    

আবদুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় চার-পাঁচ বছর পর আমি কৃষির প্রতি আকৃষ্ট হই। আমার এক ভগ্নিপতি আবদুল হকের অনুপ্রেরণায় এই ফসল উৎপাদনের নেশা আমাকে পেয়ে বসে। মাত্র দু-তিন শতক জায়গায় সর্বপ্রথম টমেটো চাষ শুরু করি এবং তখনই সেই টমেটোগুলোর বাম্পার ফলন হয়।  

আবদুল কাইয়ুমের নিজের ক্ষেতের শিমকৃষি জমিতে মূলধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গরুর খামার, হাঁস পালনসহ ধান, টমেটো, শিম, বেগুন প্রভৃতি নানাজাতের সবজি উৎপাদনে আমার প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকার মূলধন খাটিয়েছি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় আট থেকে দশ লাখ টাকা বাৎসরিক আয় হয়। তবে এ বছর অতিবৃষ্টিতে অনেক লোকসান হয়েছে আমার।  

নিজের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে দিয়ে গলা ভারী হয়ে আসে আবদুল কাইয়ুমের। তিনি বলতে থাকেন, ‌‌আজকের মতো ‌‌‌এতো সহজ ছিল না আগের দিনগুলো। আমি নিজে আমার ফসলগুলো বস্তায় করে চুনারুঘাট বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। এখন তো পাইকারি ক্রেতারা এসে নগদ টাকা দিয়ে নিয়ে যান।  

বৈবাহিক জীবনে দুই মেয়ে ও তিন ছেলের জনক তিনি। দুই মেয়েই বিবাহিত। বড় ছেলে রুবেল তার সঙ্গেই কৃষিপণ্য উৎপাদক হিসেবে নিয়জিত। অপর দুই ছেলে একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার; অপরজন কুমিল্লায় স্বাস্থ্য বিষয়ক ডিপ্লোমায় পড়াশোনা করছেন। স্ত্রী পারুল বেগম তাকে সবসময় উৎসাহ-সহযোগিতা করেন।  

জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন প্রসঙ্গে কথা উঠলে আবদুল কাউয়ুম কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান। একটু ভেবে পরক্ষণে বলেন, আশপাশের চাষিরা আমার কাছে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে আসেন। জানতে চান এটা কেন হলো? ওটা কোনো হলো? আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে যতটুকু পারি তাদের পরমর্শ দেই। এই দিকটিই জীবনের অন্যতম অর্জন হিসেবে মনে হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।