ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

জলাবদ্ধতায় হয়নি সরিষার আবাদ, শঙ্কায় ইরিও

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
জলাবদ্ধতায় হয়নি সরিষার আবাদ, শঙ্কায় ইরিও বন্যার পানি এখনও না নামায় চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠে আবাদ হয়নি সরিষ। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলের ছোট একটি অংশ কালিদাসনীলি বিল। চলতি রবিশস্যের মৌসুমে প্রায় ২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বিলটি হলুদ সমুদ্রে পরিণত হওয়ার কথা ছিল। মাঠজুড়ে শোভা পাওয়ার কথা ছিল রবি শস্য সরিষা ফুলের সমারোহ।

কিন্তু এ বছর চিরচেনা সেই দৃশ্যটি হারিয়ে ফেলেছে কালিদাসনীলি। বন্যার পানিতে এখনও নিমজ্জিত এ বিলের বিস্তীর্ণ মাঠ।

আবাদ হয়নি সরিষা, শঙ্কায় রয়েছে ইরির আবাদও।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গেলে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের কালিদাসনীলি ছাড়াও মহিষলুটি, ভায়ট, দিঘি ও মঙ্গলবাড়িয়া বিলগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে।

কালিদাসনীলি গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী বাংলানিউজকে জানান, তার ৩০ বিঘা জমির মধ্যে ১৫ বিঘাই জলাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সরিষার আবাদ না করতে পেরে অন্তত এক লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি।

একই এলাকার কৃষক আফসার আলী তার প্রায় ৫৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করতে পারেননি বলে জানান। আসছে ইরির আবাদ নিয়েও তিনি শঙ্কায় রয়েছেন।

কালিদাসনীলির আব্দুল মান্নান, ওসমান আলী, ছাইদুর রহমান ও মজিবর হাজী সলঙ্গা উপজেলার আমসড়া এলাকার কৃষক জুলমাত আলী ও মুনজুর হাজীসহ শতাধিক কৃষক জানান, গত ৫/৭ বছর ধরে কৃষিজমি কেটে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন, খাল-জলাশয়-নয়নজুলি দখল করে বসতভিটা নির্মাণ এবং নাটোরের সিংড়া ও পাবনার চাটমোহরে সুতিজাল দিয়ে পানিপ্রবাহের গতিরোধ করা হয়েছে।
এসব কারণে চলতি বছরের দু’দফা বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশিত হয়নি। এর ফলে পুরো চলনবিলের হাজার হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ায় রবিশস্য সরিষার আবাদ করতে পারেননি কৃষকেরা। আগামী ইরি মৌসুমে ধান চাষ নিয়ে শঙ্কায়ও রয়েছেন তারা।

  আগামী ইরি মৌসুমে ধান চাষ নিয়ে শঙ্কায়ও রয়েছেন চাষিরা।  ছবি: বাংলানিউজ  চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তাড়াশ উপজেলার ২ হাজার হেক্টর, উল্লাপাড়ার এক হাজার হেক্টর, সিংড়ার ৫৫০ হেক্টর ও গুরুদাসপুরের এক হাজারসহ মোট সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে সরিষার আবাদ করা যায়নি।

কৃষক আজগর প্রামাণিক বলেন, সরিষার আবাদ করে সেই ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে ইরির আবাদ করা হয়। এবার আর সেটা হলো না। এখন ধান রোপণ করতে গেলে ঋণ নেওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছর এ উপজেলার সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এ বছর তা নেমে দাড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার হেক্টরে। এতে অন্তত ৩ হাজার মেট্রিকটন সরিষার উৎপাদন কমে যাবে।

তিনি আরও জানান, বিলের মাঝখানে অপরিকল্পিতভাবে শত শত পুকুর খনন করা হয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই পুকুরের চারপাশের জমিগুলোতে পানি জমে যায়। এসব জমির পানি নিষ্কাশিত হওয়ার রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে মাছ ধরতে চলনবিলের বড় খাল আর জলাশয়গুলো ভরাট করে সুতিজাল দিয়ে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ করায় সরিষা আবাদে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।

অপরিকল্পিত পুকুর খনন, খাল-জলাশয়-নয়নজুলি দখল করে বসতভিটা নির্মাণ ও পানিপ্রবাহ বন্ধ করাই এ অবস্থার জন্য দায়ী।  ছবি: বাংলানিউজনাটোরের সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চলনবিলের নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি যত্রতত্র পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সিংড়ার ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার সরিষার আবাদ বন্ধ রয়েছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খিজির হোসেন প্রামাণিক জানান, জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর উল্লাপাড়ার এক হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা সম্ভব হয়নি।

চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক বিবর্তনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে উন্নয়নের নামে চলনবিলকে ধ্বংস ও খাল-বিল দখল করা হচ্ছে। ফলে শস্য-মৎস্যের উৎপাদন হ্রাস ও কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চলনবিলই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সরকারের কাছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চলনবিলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।